ব্রীচ পজিশন অফ বেবি - কিভাবে বুঝবেন বাচ্চার ব্রীচ পজিশন আছে?
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি বাচ্চার জন্মের সময় মায়ের পেটের মধ্যে তার অবস্থান এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি পুরো প্রসব প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
সাধারণত, গর্ভধারণের শেষ দিকে বাচ্চার অবস্থান নিচের দিকে (সদৃশ অবস্থানে) হওয়া উচিত, যাতে প্রসব প্রক্রিয়া সহজ এবং নিরাপদ হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা পেটের মধ্যে বিপরীত অবস্থানে থাকে, যা একে বলা হয় 'ব্রীচ পজিশন'। ব্রীচ পজিশন এক ধরনের অবস্থান যেখানে বাচ্চার পায়ের দিক বা নিতম্ব নিচের দিকে থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে আলাদা। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কীভাবে বুঝবেন বাচ্চার ব্রীচ পজিশন রয়েছে এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।
ভুমিকাঃ
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বাচ্চার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ এটি প্রসবের প্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। সাধারণত, গর্ভধারণের শেষ সময়ে বাচ্চা মাথা নিচে এবং পা উপরে অবস্থান করে থাকে, যাকে বলা হয় 'হেড ডাউন পজিশন', যা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আদর্শ। তবে, কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা পেটের মধ্যে বিপরীত অবস্থানে থাকে, অর্থাৎ তার পা বা নিতম্ব নিচের দিকে থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে ভিন্ন। এই অবস্থা 'ব্রীচ পজিশন' হিসেবে পরিচিত।
পোস্ট সুচিপত্রঃ কিভাবে বুঝবেন বাচ্চার ব্রীচ পজিশন আছে?ব্রীচ পজিশন একটি গুরুতর বিষয়, কারণ এর ফলে প্রসবের সময় নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যেমন বাচ্চার মাথা বের হতে না পারা, যা স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। বাচ্চার পায়ের দিকে বা নিতম্বের দিকে থাকার ফলে, প্রসবের সময় বিভিন্ন শারীরিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, যা মা ও বাচ্চার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এ ধরনের অবস্থায় মা এবং চিকিৎসক উভয়ের জন্য সাবধানতা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকরা বাচ্চার অবস্থান নির্ধারণ করার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করেন। এই লেখায়, আমরা বাচ্চার ব্রীচ পজিশনের প্রভাব, এর কারণ, এবং কীভাবে এই অবস্থান চিহ্নিত করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি, বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি এবং চিকিৎসক কীভাবে এটির মোকাবিলা করতে পারেন, সেই বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ব্রীচ পজিশন এক ধরনের জটিলতা, তবে এটি কোনওভাবেই অপরিবর্তনীয় নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন বেশ কিছু উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব হতে পারে। এই প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে বিশেষ ধরনের ব্যায়াম, চিকিৎসকের দ্বারা করা বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা।
তবে, ব্রীচ পজিশন যেকোনো পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগজনক হলেও, এটি কোনোভাবেই ভবিষ্যৎ মা ও শিশুর জন্য অনিবার্য বিপদ সৃষ্টি করে না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মা এবং বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই লেখায় আমরা সেইসব পদক্ষেপ এবং কৌশলগুলো জানবো, যা চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় এই অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োগ করতে পারেন।
সুতরাং, যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার বাচ্চার অবস্থান নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে, তবে এই লেখাটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনাকে বিস্তারিত জানানো হবে যে, কীভাবে আপনি বাচ্চার অবস্থান বুঝতে পারবেন, কীভাবে চিকিৎসকরা এই অবস্থান মোকাবিলা করেন এবং কী কী পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে বাচ্চার পজিশন পরিবর্তন করা সম্ভব হতে পারে।
ব্রীচ পজিশন কি?
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি ব্রীচ পজিশন এমন একটি অবস্থা, যেখানে গর্ভস্থ বাচ্চার মাথা না হয়ে পা বা নিতম্ব নিচে থাকে। সাধারণত, গর্ভাবস্থার ৩০ সপ্তাহের পর বাচ্চার মাথা নিচের দিকে চলে আসে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতম্ব বা পায়ের পজিশনে থাকে। এই অবস্থায় শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। ব্রীচ পজিশনের বাচ্চাকে নিরাপদভাবে জন্ম দেওয়ার জন্য কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়, যেমন সিজারিয়ান সেকশন।
ব্রীচ পজিশন কি কারণে হয়?
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি ব্রীচ পজিশনের কারণ বিভিন্ন হতে পারে, তবে এটি সাধারণত স্বাভাবিকের চেয়ে বিরল। কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে:
গর্ভাবস্থার সমস্যাঃ যদি গর্ভে অতিরিক্ত অমনি পানি (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) থাকে অথবা কম পানি থাকে, তবে বাচ্চার পজিশন অস্বাভাবিক হতে পারে।
গর্ভের আকার বা গঠন: যদি মায়ের গর্ভের আকার বা গঠন পরিবর্তিত হয়, তবে বাচ্চার স্থানচ্যুতি হতে পারে।
গর্ভকালীন বয়স: গর্ভকালীন বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পজিশন পরিবর্তন হতে পারে, যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩৪-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যায়।
একাধিক গর্ভাবস্থা (যেমন যমজ বাচ্চা): একাধিক বাচ্চার কারণে গর্ভে স্থান সংকুলান হতে পারে এবং এটি বাচ্চার পজিশনকে প্রভাবিত করতে পারে।
ব্রীচ পজিশনের প্রকার
ব্রীচ পজিশন সাধারণত তিন ধরনের হতে পারে:
ফুল ব্রীচ: এতে বাচ্চার পা, হিপস এবং নিতম্ব নিচে থাকে, তবে মাথা উপরে।
হিপস ব্রীচ: এখানে বাচ্চার শরীরের নিচের অংশ (হিপস) নিচে থাকে এবং পা উপরে।
ফুটলিং ব্রীচ: বাচ্চার পা প্রথমে নিচে থাকে, এটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণত সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া হয়।
কিভাবে বুঝবেন বাচ্চার ব্রীচ পজিশন আছে?
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি বাচ্চার অবস্থান বুঝতে কিছু লক্ষণ এবং পরীক্ষা করা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাইনোকোলজিস্ট বা ডাক্তারের পরামর্শের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি দেওয়া হল যা দিয়ে আপনি জানবেন যে বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ পজিশনে রয়েছে।
১. শারীরিক পরীক্ষা
ডাক্তারের শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চার অবস্থান বোঝা যায়। এই পরীক্ষায় তারা মায়ের পেটের বিভিন্ন অংশে চাপ প্রয়োগ করে বাচ্চার অবস্থান নির্ধারণ করেন।
২. আলট্রাসোনোগ্রাফি
বাচ্চার অবস্থান সঠিকভাবে নির্ধারণ করার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফি বা ইউএসজি এক গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পরীক্ষায় গর্ভে বাচ্চার অবস্থান এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থা সঠিকভাবে দেখা যায়।
৩. টর্চ টেস্ট
এটি একটি নরম পদ্ধতি যা বিশেষজ্ঞরা ব্যবহার করেন বাচ্চার মাথা এবং পা শনাক্ত করতে। ডাক্তারের নির্দেশে এই পরীক্ষাটি করা হয়।
ব্রীচ পজিশনের ঝুঁকি
ব্রীচ পজিশন শুধু মা এবং বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবে অনেক সময় চিকিৎসকরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। কিছু ঝুঁকি হলো:
পালস হার পরিবর্তন: বাচ্চার পজিশনের কারণে তার পালস হার পরিবর্তিত হতে পারে, যা বিশেষ মনোযোগ দাবি করে।
গর্ভস্থ আঘাত: বাচ্চার পা বা নিতম্ব দিয়ে জন্ম হলে তার গর্ভস্থ আঘাত হতে পারে।
স্বাভাবিক প্রসব না হওয়া: সাধারণভাবে, বাচ্চার মাথা নিচে থাকলে প্রসব প্রক্রিয়া সহজ হয়, তবে ব্রীচ পজিশনে এটি সম্ভব নয় এবং সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হয়।
ব্রীচ পজিশনের চিকিৎসা
ব্রীচ পজিশন থাকলে চিকিৎসকরা কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এটি গর্ভাবস্থার ৩৪-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব, তবে কিছু ক্ষেত্রে সিজারিয়ান সেকশন করতে হয়। চিকিৎসকরা সাধারণত পরামর্শ দেন:
আরো পড়ুনঃ জরায়ুর মুখ কখন খুলে - গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ খোলার জন্য করণীয়
মুখের মাধ্যমে বাচ্চাকে অবস্থান পরিবর্তন করানো: কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে বাচ্চাকে স্থিতিস্থাপকভাবে সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসা হয়।
সিজারিয়ান সেকশন: যদি বাচ্চার অবস্থান না পরিবর্তিত হয় এবং স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব না হয়, তবে সিজারিয়ান সেকশন করা হয়।
ব্রীচ পজিশন নিয়ে মা-বাবার উদ্বেগ
ব্রীচ পজিশন নিয়ে মা-বাবার মধ্যে অনেক উদ্বেগ দেখা দেয়, বিশেষ করে যখন জানা যায় যে স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয়। তবে, অনেক সময় চিকিৎসকরা এই অবস্থায় নিরাপদ জন্মের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসককে পরামর্শ দিলে এবং নিয়মিত আলট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ব্রীচ পজিশন সম্পর্কিত সাধারণ ভুল ধারণা
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি অনেক মা-বাবা ব্রীচ পজিশনের বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা পোষণ করেন। সঠিক তথ্য জানা না থাকলে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং অযথা ভয় সৃষ্টি হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো যা বাচ্চার ব্রীচ পজিশন সম্পর্কে মানুষ অনেক সময় বিশ্বাস করে:
১. ব্রীচ পজিশন মানেই সিজারিয়ান সেকশন
এটা একটি প্রচলিত ভুল ধারণা যে, ব্রীচ পজিশন থাকলেই সিজারিয়ান সেকশন করাতে হয়। বাস্তবে, সিজারিয়ান সেকশন শুধুমাত্র তখনই করা হয় যখন বাচ্চার অবস্থান ঠিক করতে বা প্রাকৃতিকভাবে প্রসব সম্ভব না হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পজিশন পরিবর্তনের চেষ্টা করেন এবং বাচ্চা যদি সঠিক অবস্থানে চলে আসে, তবে স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব।
২. ব্রীচ পজিশন নিশ্চিতভাবেই বিপদজনক
এটি আবার একটি ভুল ধারণা। যদিও ব্রীচ পজিশন কিছু ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, তবে অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এটি নিরাপদে মোকাবিলা করা সম্ভব। বাচ্চার অবস্থান সঠিক হলে বা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলে কোনো বড় সমস্যা না-ও হতে পারে।
৩. ব্রীচ পজিশনে বাচ্চা মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি
এটা একটি অতি রক্ষণশীল ধারণা। যদিও কিছু পরিস্থিতিতে বাচ্চার জন্য ঝুঁকি থাকতে পারে, তবে প্রতিটি কেস আলাদা। চিকিৎসকরা বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পুরোপুরি নজরদারি রাখেন এবং যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ব্রীচ পজিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ
যদি আপনার গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ থাকে, তাহলে কী করতে হবে তা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. পজিশন পরিবর্তন করা
কিছু ক্ষেত্রে, গাইনোকোলজিস্টরা বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। এর মধ্যে একটি হলো External Cephalic Version (ECV), যেখানে চিকিৎসকরা গর্ভস্থ বাচ্চাকে সাবধানে হাত দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে সঠিক অবস্থানে আনার চেষ্টা করেন। তবে, এটি সব ক্ষেত্রে সম্ভব নয় এবং বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
২. চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ
বাচ্চার অবস্থান নিয়মিত আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি বাচ্চা ৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সঠিক অবস্থানে না আসে, তাহলে চিকিৎসকরা বিকল্প উপায় নিয়ে চিন্তা করেন। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাচ্চার সুস্থতা এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উপরও নজর রাখা হয়।
৩. সিজারিয়ান সেকশন
যদি বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন না হয় এবং স্বাভাবিক প্রসবের কোনো সম্ভাবনা না থাকে, তবে সিজারিয়ান সেকশন একটি নিরাপদ পন্থা হয়ে দাঁড়ায়। সিজারিয়ান সেকশনে বাচ্চা জন্মানো ঝুঁকি মুক্ত এবং নিরাপদ হতে পারে, বিশেষত যখন বাচ্চা ব্রীচ অবস্থানে থাকে।
ব্রীচ পজিশনের জন্য প্রস্তুতি
ব্রীচ পজিশন থাকলে মা-বাবার জন্য কিছু প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। এটি গর্ভাবস্থার একটি গুরুতর মুহূর্ত এবং যথাযথ প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির কথা বলা হলো:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন এবং আয়রন গ্রহণ মায়ের শারীরিক অবস্থাকে শক্তিশালী রাখে এবং গর্ভস্থ বাচ্চারও উন্নতি হয়।
২. যোগব্যায়াম ও হালকা শারীরিক কার্যকলাপ
যদিও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটা মায়ের শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে এবং বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে, এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
৩. মানসিক প্রস্তুতি
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মায়ের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। বাচ্চার ব্রীচ পজিশন থাকলে কিছুটা উদ্বেগ অনুভূত হতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও যত্নের মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া জরুরি।
ব্রীচ পজিশন নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা
ব্রীচ পজিশন নিয়ে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে যে কিছু নির্দিষ্ট কারণে বাচ্চার পজিশন পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে কিছু বিশেষ ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে। গবেষকদের মতে, সঠিকভাবে চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত External Cephalic Version (ECV) পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারে, বিশেষত যদি বাচ্চা নির্দিষ্ট সপ্তাহে থাকে।
ব্রীচ পজিশন এবং সন্তান লাভের ভবিষ্যত সম্ভাবনা
ব্রীচ পজিশন কোনো ক্ষেত্রে উদ্বেগের সৃষ্টি করতে পারে, তবে এটি চূড়ান্তভাবে গর্ভাবস্থা বা জন্মের ফলাফলকে নির্ধারণ করে না। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, বিশেষ করে ৩৫ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, যদি বাচ্চার পজিশন স্থির থাকে এবং পরিবর্তন না হয়, তখন চিকিৎসকরা এটি মনিটর করার জন্য সিজারিয়ান সেকশন বা অন্যান্য নিরাপদ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মা এবং বাচ্চার সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
ব্রীচ পজিশন এবং সিজারিয়ান সেকশন
ব্রীচ পজিশনে থাকা বাচ্চাকে নিরাপদভাবে জন্ম দেওয়ার জন্য চিকিৎসকরা সাধারণত সিজারিয়ান সেকশন সুপারিশ করেন। সিজারিয়ান সেকশন এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মায়ের পেটের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেওয়া হয়। এটি তখনই করা হয় যখন স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি থাকে অথবা বাচ্চার অবস্থান বা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সিজারিয়ান সেকশন একটি নিরাপদ পদ্ধতি যা মা ও বাচ্চার জন্য ঝুঁকির সম্ভাবনা কমিয়ে আনে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবও সম্ভব হতে পারে যদি বাচ্চার অবস্থান ঠিক করা যায় বা যদি বাচ্চার ব্রীচ পজিশন অতি গুরুতর না হয়।
বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার পদ্ধতি
যদি গর্ভে বাচ্চার পজিশন ব্রীচ থাকে, তবে কিছু কৌশল রয়েছে যার মাধ্যমে বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করতে চেষ্টা করা যেতে পারে। কিছু চিকিৎসক আলট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদ্ধতিগুলি নির্ধারণ করেন। নিচে কিছু সাধারণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
১. External Cephalic Version (ECV)
এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য মায়ের পেটের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এটি সাধারণত ৩৬ সপ্তাহের পরে করা হয় এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সফল হয়। তবে, এটি শুধুমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে করা উচিত এবং কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি করা নিরাপদ না-ও হতে পারে।
২. গর্ভবতী মায়ের পজিশন পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় বিশেষ কিছু শারীরিক কার্যকলাপ ও অবস্থান গ্রহণ বাচ্চার পজিশন পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে। যেমন, মাথা নিচে রাখা, হাঁটাহাঁটি করা, সোজা হয়ে শুয়ে থাকা বা বিশেষ ধরনের যোগব্যায়াম করা, এগুলি বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে। তবে, এগুলি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।
৩. অ্যাকুপাংকচার
এটি একটি প্রাচীন চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে সূঁচ দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিটি বাচ্চার পজিশন পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি সবার জন্য উপযোগী নয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের চিকিৎসা নেওয়া উচিত নয়।
ব্রীচ পজিশনের পরিণতি
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি যদিও ব্রীচ পজিশন কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মা এবং বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিছু ঝুঁকি থাকলেও, তা প্রতিরোধযোগ্য হতে পারে যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং চিকিৎসকরা নিয়মিত পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান প্রদান করেন। গর্ভকালীন সময়ে মা এবং বাচ্চার স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত চিকিৎসক পরামর্শ ও পরীক্ষার মাধ্যমে তৎকালিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
মা-বাবার জন্য কিছু টিপস
মা-বাবাদের জন্য কিছু উপদেশ রয়েছে, যা বাচ্চার ব্রীচ পজিশন থাকলেও গর্ভাবস্থাকে সহজ এবং নিরাপদ করে তুলতে সাহায্য করবে:
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কত মাসে সিজার করলে ভালো হয় বিস্তারিত জানুন
১. নির্দিষ্ট সময় পর চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা
বাচ্চার অবস্থান নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে, গর্ভকালীন সময়ে নির্দিষ্ট সময় পর চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত আলট্রাসোনোগ্রাফি ও পরামর্শ সঠিক সময়ে সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
২. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
সুস্থ জীবনযাপন মায়ের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি পুষ্টিকর ডায়েট, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং উপযুক্ত শারীরিক কার্যকলাপ বাচ্চার জন্য ভাল ফলাফল দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জলপান, ফল, সবজি, প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
৩. মানসিক সুস্থতা
গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করুন। ধ্যান, যোগব্যায়াম, সঙ্গী বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করুন। মনের শান্তি বাচ্চার সুস্থতায় সাহায্য করতে পারে।
৪. পজিশন পরিবর্তন
যদি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার পজিশন ব্রীচ থাকে, তবে মায়ের জন্য কিছু পজিশন পরিবর্তন করার অভ্যাস গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ অবস্থানে শুয়ে থাকা বা হালকা যোগব্যায়াম বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।
ব্রীচ পজিশন এবং প্রসবের প্রস্তুতি
ব্রীচ পজিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন গর্ভাবস্থার সময়ের শেষ দিকে এসে প্রসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। মা এবং চিকিৎসক উভয়ের জন্য এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি, যা সঠিক পরিকল্পনা এবং সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত। প্রসবের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, বাচ্চার অবস্থানও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ বাচ্চার পজিশন যদি সঠিক না হয়, তবে প্রসবের প্রক্রিয়া কঠিন হতে পারে।
১. স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুতি
যদি বাচ্চা ব্রীচ অবস্থানে থাকে, তবে চিকিৎসকরা সাধারণত সিজারিয়ান সেকশন সুপারিশ করেন, কারণ বাচ্চার পায়ের বা নিতম্বের মাধ্যমে প্রসব করা সাধারণত নিরাপদ নয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে যদি বাচ্চা অবস্থান পরিবর্তন করে বা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তখন স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হতে পারে। সেজন্য মায়ের মধ্যে শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পনা
বাচ্চার পজিশন যদি ব্রীচ থাকে, তবে চিকিৎসক সবসময় মা এবং বাচ্চার সুস্থতা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এতে আলট্রাসোনোগ্রাফি, ECV, বা সিজারিয়ান সেকশন সহ অন্যান্য চিকিৎসাগত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা এবং গর্ভকালীন নিয়মিত তত্ত্বাবধান মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৩. পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া
প্রসবের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাচ্চার অবস্থান সঠিক না হয় এবং সিজারিয়ান সেকশন প্রয়োজন হয়, তাহলে কোনো ধরনের দেরি না করে তা করতে হবে। অন্যদিকে, যদি বাচ্চা অবস্থান পরিবর্তন করে এবং স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হয়, তাহলে চিকিৎসকরা যথাসম্ভব স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
ব্রীচ পজিশনে বাচ্চার নিরাপত্তা
ব্রীচ পজিশন যেহেতু স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা তৈরি করতে পারে, তাই চিকিৎসকরা বিশেষ নজর রাখেন যাতে বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:
১. ফেটাল মনিটরিং
বাচ্চার পজিশন ও স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখতে চিকিৎসকরা নিয়মিত ফেটাল মনিটরিং ব্যবহার করেন। এটি বাচ্চার হার্টবিট এবং অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে। ফেটাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসকরা দ্রুত সমস্যাগুলি শনাক্ত করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেন।
২. শিশুর পজিশন পর্যবেক্ষণ
বাচ্চার পজিশন পরিবর্তন করার জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। যদি বাচ্চা বিপদজনক অবস্থানে থাকে, তবে তৎকালীন সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ECV পদ্ধতি, যেমন আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়।
৩. সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা
বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ হলে, চিকিৎসকরা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন। কিছু ক্ষেত্রে, একাধিক শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাচ্চার পজিশন পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে। তবে, যদি কোনভাবেই তা সম্ভব না হয়, তখন সিজারিয়ান সেকশন করা যেতে পারে।
ব্রীচ পজিশনের ফলে দেরি বা প্রসবের জটিলতা
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি যখন বাচ্চা ব্রীচ অবস্থানে থাকে, তখন কিছু জটিলতা হতে পারে, যার মধ্যে প্রসবের সময় পায়ের বা নিতম্বের মাধ্যমে বের হওয়া, শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়ার ঝুঁকি, এবং মাথার পজিশন না হওয়ার কারণে প্রসবের গতি স্লো হয়ে যাওয়া অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে, কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক প্রসব সম্ভব নয় এবং সিজারিয়ান সেকশন একটি নিরাপদ বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।
১. প্রসবে সময় বাচ্চার অবস্থান
ব্রীচ পজিশনে প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা সঠিকভাবে নেমে না আসা বা পা বের হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে মায়ের এবং বাচ্চার জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সঠিকভাবে প্রসবের প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে সহায়তা করেন।
২. স্বাভাবিক প্রসব এবং বাচ্চার সুরক্ষা
যদি বাচ্চা সুস্থ থাকে এবং কোন সমস্যা না থাকে, তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা করবেন স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে বাচ্চা পৃথিবীতে আনতে। তবে, যেহেতু ব্রীচ পজিশনে থাকে, সেক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা এবং মনিটরিং প্রয়োজন। কখনো কখনো, প্রসবের সময় আঘাত বা ত্রুটি হতে পারে, যা মায়ের এবং বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ব্রীচ পজিশন এবং পরিবারের মানসিক প্রস্তুতি
মা এবং বাবা, উভয়ের জন্য এটি একটি অস্থির সময় হতে পারে, বিশেষত যখন তারা জানতে পারেন যে, বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ। তবে, পরিস্থিতির প্রতি সঠিক মানসিক প্রস্তুতি এবং সাহসী মনোভাব তাদের আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। গর্ভকালীন সময়ে আত্মবিশ্বাস ও সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. মা-বাবার মানসিক প্রস্তুতি
গর্ভাবস্থায় মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবাকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি বাচ্চার পজিশন ব্রীচ থাকে, তবে উদ্বেগের পরিবর্তে সচেতনতা এবং সুস্থ মানসিক অবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
২. বিশ্বস্ত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ
বিশ্বস্ত এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার নিরাপত্তা এবং মা-বাবার মানসিক অবস্থার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের সহায়তায় নিরাপদ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
৩. পারিবারিক সমর্থন
গর্ভাবস্থায় পরিবারের সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মা-বাবা উভয়ের জন্য মানসিক সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষত যখন বাচ্চার অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ থাকে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, উদ্বেগ ভাগাভাগি করা, এবং একে অপরকে সমর্থন দেওয়া অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
ব্রীচ পজিশন এবং পরবর্তী গর্ভাবস্থা
ব্রীচ পজিশন মায়ের জন্য শুধুমাত্র একটি শারীরিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি একটি মানসিক প্রস্তুতিরও ব্যাপার। মায়ের ও চিকিৎসকের যৌথ প্রচেষ্টায় বাচ্চার নিরাপদ জন্ম সম্ভব, তবে এর জন্য পুরো গর্ভকালীন সময় জুড়ে নিয়মিত মনিটরিং এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার পজিশন পরিবর্তিত হতে পারে, এবং একটি গর্ভবতী মহিলা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলে এই পরিবর্তনকে আরও সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন।
১. গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নিয়মিত মনিটরিং
ব্রীচ পজিশনটি সাধারণত গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘটে। এর ফলে, বিশেষত ৩৬-৩৭ সপ্তাহের মধ্যে, গাইনোকোলজিস্ট বা উর্বরতা বিশেষজ্ঞরা মায়ের গর্ভে বাচ্চার অবস্থান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এতে করে মা এবং বাচ্চার জন্য নিরাপদ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। এই পর্যবেক্ষণটি সময়মত আলট্রাসোনোগ্রাফি, পেলভিক পরীক্ষা, এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য নিরীক্ষণ করা হয়।
২. এলাকা নির্ধারণ করা
গর্ভাবস্থায় মায়ের কী ধরনের সুবিধা বা অসুবিধা হচ্ছে, তা জানার জন্য চিকিৎসকের কাছ থেকে পরিষ্কার পরামর্শ নিতে হবে। বাচ্চার অবস্থান যদি সঠিক না হয়, তাহলে মা নির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে পারেন। চিকিৎসকরা একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য, যেমন External Cephalic Version (ECV) পদ্ধতি, যা আগেও আলোচনা করা হয়েছে।
৩. বাচ্চার পজিশন পর্যালোচনা করা
বাচ্চা যদি ব্রীচ পজিশনে থাকে, তবে এটি কোন পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলতে পারে তা চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মায়ের ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, বাচ্চা গর্ভে ফিট হয়ে থাকে এবং কোনও সমস্যা সৃষ্টি না করে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়। তবে, অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেখানে বাচ্চার অবস্থান ঠিক করা সম্ভব হয় না, তখন সিজারিয়ান সেকশন দরকার হতে পারে।
৪. চিকিৎসক এবং মায়ের সহযোগিতা
বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করলে সঠিকভাবে সিজারিয়ান সেকশন বা প্রাকৃতিক প্রসব করা যেতে পারে। এটি অবশ্যই একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা, যেখানে মায়ের অবস্থা, বাচ্চার সুস্থতা, এবং অন্যান্য শারীরিক সূচকগুলি বিবেচনাযুক্ত করা হয়। চিকিৎসক মায়ের অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ বেছে নেন এবং মা মনের শান্তির জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা পান।
ব্রীচ পজিশনের পরে পরবর্তী স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি প্রসবে পরবর্তী সময়েও বাচ্চার এবং মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে যখন সিজারিয়ান সেকশন হয়, তখন মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য কিছু বাড়তি লক্ষ্য রাখা হয়। মায়ের সিজারিয়ান পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং বিশ্রাম দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ম্যাগি নুডুলস খাওয়া কি নিরাপদ? বিস্তারিত জানুন
১. সিজারিয়ান পরবর্তী যত্ন
যদি মা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেন, তবে তিনি আরও কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন। সিজারিয়ান পরবর্তী যত্নের মধ্যে সঠিকভাবে শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ, পেটের অংশে সেলাইয়ের সুরক্ষা, এবং অন্যান্য দিক যেমন শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ, এবং গরম তাপমাত্রা পর্যালোচনা করা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
২. মায়ের খাদ্যাভ্যাস
সিজারিয়ান সেকশনের পর মা আরও কিছু সময় হাসপাতালে থাকতে পারেন। তাই তার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেয়া উচিত। পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে ফল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সিজারিয়ান পরবর্তী সময়ে শরীরকে পুনরুদ্ধার করার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ প্রয়োজন।
৩. পুনর্বাসন এবং শারীরিক কার্যকলাপ
সিজারিয়ান পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। এক্ষেত্রে শারীরিক কার্যকলাপ সীমিত রাখা এবং উপযুক্ত বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। মায়ের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর এবং এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
পরিবারের জন্য মানসিক প্রস্তুতি
মা-বাবার জন্য এটি একটি মানসিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষত যদি বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ থাকে এবং সেই কারণে অতিরিক্ত উদ্বেগ থাকে। তবে, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা এবং একে অপরকে সমর্থন দেওয়া তাদের জন্য অনেকটা সহজ হতে পারে।
১. সুস্থ মানসিকতা বজায় রাখা
গর্ভাবস্থার মধ্যে, বিশেষ করে যদি বাচ্চার পজিশন ব্রীচ থাকে, তবে মানসিক চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে, আত্মবিশ্বাসী এবং শান্ত থাকতে পারেন। গর্ভকালীন সময়ে এটি গর্ভধারণের চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও সহজ করে তোলে।
২. বাচ্চার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা
মা-বাবাকে বাচ্চার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যদি কোনও ধরনের উদ্বেগ বা অসুবিধা থাকে, তাহলে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। বাচ্চার সুস্থতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকরা সমর্থন দেবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৩. পরিবারের সমর্থন
পরিবারের সদস্যদের সমর্থন গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবা একে অপরকে শক্তি এবং সাহস দিতে পারেন, যা গর্ভাবস্থার সময় সহায়ক হতে পারে। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।
উপসংহার
ব্রীচ পজিশন অফ বেবি ব্রীচ পজিশন হল এমন একটি অবস্থা যেখানে বাচ্চার পা বা নিতম্ব নিচে থাকে, যা সাধারণভাবে গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে ঘটে। এই অবস্থায় মা-বাবার উদ্বেগ স্বাভাবিক, তবে সঠিক চিকিৎসক নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিরাপদে মোকাবেলা করা সম্ভব। নিয়মিত পরামর্শ, পরীক্ষা এবং সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মা ও বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করা যেতে পারে। যদি আপনার বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ থাকে, তবে নির্দ্বিধায় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন।
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url