বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে? ২০২৫
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য বর্তমানে কি খরচ হয়? ২০২৫ সালে ইতালি ভ্রমণ বা বসবাসের জন্য কি খরচ দাঁড়াবে? অনেকেই ভাবেন, ইতালি যাওয়ার জন্য কেন এত টাকা লাগে?
কেন আমাদেরকে এত বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়? আজকে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব এবং বিস্তারিতভাবে জানাব যে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য কত খরচ হবে।
ভুমিকাঃ
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার খরচ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রায়ই নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। অধিকাংশই জানতে চান কেন ইতালি যাওয়ার খরচ এত বেশি হতে পারে এবং কেন এই খরচের পরিমাণ অনেক সময় বেশ চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। ২০২৫ সালে, এই খরচ আরও পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এজন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা পূর্বাভাস এবং ভ্রমণ খরচ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানি।
পোস্ট সুচিপত্রঃ বাংলাদেশ থেকে ইতালিএখনকার দিনে, ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ইতালি অনেকটা জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের জন্য। ইতালির বিভিন্ন শহর যেমন রোম, মিলান, ভেনিস এবং ফ্লোরেন্স পর্যটক এবং কর্মী উভয়ের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিদেশে কাজের সুযোগ, পড়াশোনা এবং পর্যটনের জন্য ইতালি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এই ভ্রমণকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা এবং খরচের বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
প্রথমত, এই খরচের মূল উপাদানগুলো কি কি তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ যখন ইতালি যাওয়ার জন্য প্ল্যানিং শুরু করে, তখন সবচেয়ে প্রথমে যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো ফ্লাইটের খরচ। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য ফ্লাইটের খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হয়ে থাকে, যা প্রায় ৭০,০০০ থেকে ১২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে, এই খরচের তারতম্য বেশ কিছু ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন—বিমান সংস্থা, মৌসুম, টিকিটের অগ্রিম বুকিং ইত্যাদি। সাধারণত, শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালে ফ্লাইটের খরচ বেশি হয়ে থাকে, কারণ এই সময়টি পর্যটকদের জন্য অনেক জনপ্রিয়।
এরপর আসি ভিসা খরচের দিকে। বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য, সাধারণত শেংগেন ভিসা প্রয়োজন হয়। এই ভিসা পাওয়া ততটা সহজ নয় এবং ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কিছু সময় এবং অর্থের দাবি রাখে। শেংগেন ভিসার জন্য আবেদন ফি প্রায় ৮,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, ভিসা সংক্রান্ত কিছু অতিরিক্ত খরচ যেমন ডাক সার্ভিস এবং অন্যান্য প্রসেসিং ফি আপনার মোট খরচে যোগ হতে পারে।
এছাড়া, ইতালিতে বসবাসের খরচ নিয়েও অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। বিশেষত, আপনি যদি সেখানে দীর্ঘমেয়াদে বসবাস করতে চান, তাহলে আপনাকে পারমেসো ডি সোর্নো (পারমেসো ডি সোর্নো) নামে একটি বসবাসের অনুমতিপত্র নিতে হবে, যা কিছু নির্দিষ্ট খরচের সাথে আসে। এছাড়াও, ইতালিতে থাকার জন্য আপনার খাবার, বাসস্থান এবং দৈনন্দিন খরচের জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত আর্থিক প্রস্তুতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে, শহরের ধরণের উপর ভিত্তি করে ভাড়া কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে—যেমন রোম, মিলান এবং ভেনিসের মতো বড় শহরে ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
এছাড়া, বিদেশে গিয়ে বসবাস শুরু করার জন্য আপনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে, যেমন—স্বাস্থ্য বীমা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, এবং সেখানে দৈনন্দিন জীবনে উপযোগী কিছু জিনিস সংগ্রহ করা। এসব বিষয়গুলোর জন্যও কিছু অর্থ ব্যয় করতে হবে, যা শুরুতে প্রস্তুতি হিসেবে রাখা উচিত।
এই খরচগুলো কেবলমাত্র একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, তবে অন্যান্য অনেক খরচ রয়েছে যা আপনি ইতালি যাওয়ার সময় বা সেখানে বসবাসের সময় সম্মুখীন হতে পারেন।
আমরা যদি সঠিকভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে যে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার খরচ শুধুমাত্র ফ্লাইট এবং ভিসা ফি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়। কারণ, ইতালিতে পৌঁছানোর পর সেখানে থাকা, কাজ করা, এবং জীবনযাত্রা পরিচালনা করতে গিয়ে আরেকটি স্তরের খরচ থাকতে পারে যা আপনার প্রথমে ধারণা করা খরচের তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে।
এখানে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই খরচের ধরণ ব্যক্তিগত এবং পরিস্থিতিভিত্তিক হতে পারে। কোনো একজন ব্যক্তি যদি সেখানে চাকরি করতে যান, তবে তার খরচের পরিমাণ হবে ভিন্ন, আর কেউ যদি পর্যটক হিসেবে যান, তবে তার খরচের পরিমাণ আবার অন্যরকম হতে পারে।
এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হল, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার খরচ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং সঠিক পরামর্শ প্রদান করা। এই সঠিক পরিকল্পনা এবং তথ্যের মাধ্যমে, আপনি কীভাবে আপনার ভ্রমণের খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং কি ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, তা জানার সুযোগ পাবেন।
আশা করি, এই বিস্তারিত বিশ্লেষণ আপনাকে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে সাহায্য করবে যে কিভাবে আপনি ইতালি যাওয়ার খরচ ও প্রক্রিয়া নিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন, এবং কীভাবে আপনি সহজেই প্রস্তুতি নিতে পারেন ২০২৫ সালের জন্য।
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের ধরন
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য মূলত দুটি ধরনের খরচ হতে পারে: ১. ফ্লাইট খরচ: এটিই প্রধান খরচ যা প্রথমে মাথায় আসে। ২. ভিসা খরচ: ইতালি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসার খরচ।
এছাড়া, টিকেট বুকিং, বিমানে খাবার, ট্রান্সপোর্টেশন, ইনস্যুরেন্স, এবং স্থানীয় খরচও কিছুটা হিসাব করতে হয়।
১. ফ্লাইট খরচ
ফ্লাইটের খরচ একটি প্রধান খরচ যা বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার সময় মনে রাখতে হবে। সাধারনত, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইতালির বিভিন্ন শহরে, যেমন রোম, মিলান, কিংবা ভেনিসে বিমান চলাচল করে। বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায় না, তাই সাধারণত এর মাধ্যমে ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার হয়ে যেতে হয়। এর ফলে ফ্লাইটের খরচ কিছুটা বাড়ে।
এদিকে, ফ্লাইটের খরচ বিমানের সিটের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। ইউরোপের বিভিন্ন এয়ারলাইনস, যেমন এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, এবং তুর্কিশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বিমান টিকেটের দাম সাধারনত ৭০,০০০ থেকে ১২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা মৌসুম অনুযায়ী কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
২. ভিসা খরচ
ইতালি যাওয়ার জন্য শেংগেন ভিসা প্রযোজ্য। শেংগেন ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু ফি প্রদান করতে হয়। ২০২৫ সালে, শেংগেন ভিসার আবেদন ফি প্রায় ৮,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া, কিছু অতিরিক্ত খরচও আসতে পারে, যেমন ডকুমেন্টের যাচাইকরণ, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, ইত্যাদি। তবে, ভিসার জন্য সঠিক ডকুমেন্টেশন এবং ইনভাইটেশন লেটার থাকলে, খরচ কিছুটা কম হতে পারে। ভিসা ফি নিয়ে পরিবর্তন হতে পারে, তাই নিয়মিতভাবে আপডেট চেক করা উচিত।
৩. অভিবাসন বা বসবাসের খরচ
ইতালিতে বসবাস করতে হলে, প্রথমে বিভিন্ন খরচের বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন:
- বাড়ি ভাড়া: ইতালিতে বাড়ির ভাড়া শহর অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। রোম, মিলান এবং ভেনিস শহরগুলিতে বাড়ি ভাড়া বেশ বেশি হতে পারে, প্রায় ৩০০ থেকে ৮০০ ইউরো মাসিক।
- খাবার খরচ: ইতালিতে খাবারের খরচ দৈনিক প্রায় ২০-৪০ ইউরো হতে পারে, তবে এটি আপনার জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করবে।
- ট্রান্সপোর্টেশন খরচ: পাবলিক ট্রান্সপোর্টের খরচ সাধারণত খুব কম। একটি মাসিক পাস কিনলে প্রায় ৪৫-৭০ ইউরো হতে পারে। এছাড়া ট্যাক্সি এবং অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট খরচ অতিরিক্ত হতে পারে।
৪. প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি
ইতালি যাওয়ার জন্য কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন। আপনি যদি নতুন কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সেখানে যান, তাহলে আপনাকে কাজের ভিসা অথবা স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করার আগে, আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট ঠিকমতো প্রস্তুত রাখুন।
৫. সিজনাল পার্থক্য
ভ্রমণের সময় সিজনাল পার্থক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালে, পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে, ফলে ফ্লাইট টিকেট এবং হোটেল বুকিংয়ে দাম বেড়ে যায়। এই সময়ে যাত্রা করলে খরচ একটু বেশি হতে পারে। তবে, অফ সিজনে যাত্রা করলে ফ্লাইটের দাম কিছুটা কম হতে পারে।
৬. টিপস ও রিসোর্স
ইতালিতে যাওয়ার আগে কিছু টিপস মেনে চললে খরচ কমানো সম্ভব:
- ভ্রমণের জন্য সেরা সময় বেছে নিন: শীত এবং গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন, কারণ এই সময় ভ্রমণ খরচ অনেক বেশি হয়।
- কুন্নি ট্রান্সপোর্ট: পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের চেষ্টা করুন, কারণ ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি হতে পারে।
- কোভিড-১৯ সতর্কতা: ২০২৫ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সঠিকভাবে মনিটর করুন, যাতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত খরচ না আসে।
৭. সর্বমোট খরচের হিসাব
এখন আসা যাক, বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য আপনার মোট খরচ কত হতে পারে তা নিয়ে। সাধারণত, ২০২৫ সালে এক বছরের জন্য ইতালি যাওয়ার জন্য মোট খরচ (ফ্লাইট, ভিসা, খাদ্য, ট্রান্সপোর্ট, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি) প্রায় ৫,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করবে।
এছাড়া, আপনি যদি ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তবে আপনাকে আরও বেশি খরচ করতে হতে পারে, কারণ প্রাথমিক খরচের পাশাপাশি বসবাসের খরচও অনেক বেশি হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বসবাসের জন্য প্রস্তুতি
যদি আপনি ইতালিতে দীর্ঘমেয়াদীভাবে বসবাস করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, ভিসা স্ট্যাটাস এবং কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কাজের ভিসা পেতে আপনাকে ইতালির কোনও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হতে পারে এবং এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কিছু সময় এবং খরচ নির্ধারণ করতে হবে। একইভাবে, আপনার নিজস্ব জীবনযাত্রার মান নির্ধারণের জন্য ইতালির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ দক্ষিণ কোরিয়ায় কিভাবে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়?
বাড়ি ভাড়া এবং আবাসন খরচ দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বড় চিন্তা হতে পারে। শহরগুলির মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে, যেখানে রোম, মিলান, ভেনিস বা ফ্লোরেন্সে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি। সাধারণত, এক রুমের একটি ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়া যেতে পারে, তবে শহরগুলির কেন্দ্রীয় এলাকাগুলিতে ভাড়া কিছুটা বেশি হতে পারে।
এছাড়া, স্বাস্থ্যবীমা এবং অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশন-এর খরচও অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ইতালির সরকার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বীমা সেবা প্রদান করে, এবং যদি আপনি কোনও দীর্ঘমেয়াদী ভিসায় প্রবেশ করেন, তাহলে আপনাকে স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বিদেশী মুদ্রা ও স্থানীয় মূল্য
ইতালির মুদ্রা হচ্ছে ইউরো (€), এবং বাংলাদেশি টাকার সাথে এর মানের পার্থক্য থাকতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ১ ইউরোর মূল্য ১২০-১২৫ টাকা হতে পারে। ইউরোতে ব্যবসা করার জন্য, আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টে বা মানি এক্সচেঞ্জে কিছু পরিমাণ ইউরো রাখতে হবে।
এছাড়া, স্থানীয় মূল্য সম্পর্কে ধারণা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোম বা মিলান শহরে একটি সাধারণ খাবারের দাম হতে পারে ১০ থেকে ১৫ ইউরো (প্রায় ১,২০০-১,৮০০ টাকা), তবে ছোট শহর বা গ্রামে এর দাম কম হতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে ইতালি সাধারণত পর্যটকদের জন্য তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
চাকরি এবং ব্যবসা শুরু
ইতালিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য চাকরি এবং ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। ইতালি যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কাজের জন্য ভিসা আবেদন করতে হবে এবং তারপরে সেই ভিসার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করতে হবে। ইতালিতে দক্ষতা ও প্রফেশনালিজমের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে, যেমন তথ্য প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, হেলথ কেয়ার এবং গ্রাফিক ডিজাইন। ইতালির শ্রম বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রার্থী হতে পারেন।
তবে, আপনার যদি ব্যবসা শুরু করার আগ্রহ থাকে, তাহলে ইতালি একটি দারুণ জায়গা হতে পারে। ইতালির ছোট ব্যবসা এবং স্টার্ট-আপ কোম্পানি গুলি দ্রুত উন্নতি লাভ করতে সক্ষম এবং দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্যবসা শুরু করতে, আপনাকে প্রথমে সেখানে নিবন্ধন করতে হবে, তারপর বাজার গবেষণা এবং স্থানীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের উপর কিছু সময় ব্যয় করতে হবে।
শিক্ষা এবং ভাষার প্রস্তুতি
ইতালি যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে শিক্ষা। ইতালি একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করে, যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারে। তবে, শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু খরচ যুক্ত হবে, যেমন শিক্ষাবর্ষের ফি, জীবনযাত্রার খরচ এবং ভাষা কোর্সের খরচ।
ইতালির ইতালীয় ভাষা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ দেশে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ এবং কাজের সুযোগগুলো প্রাথমিকভাবে ইতালীয় ভাষায় হয়ে থাকে। যদিও ইংরেজি অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়, তবে ইতালীয় ভাষা শিখে আপনি নিজের জীবনযাত্রা সহজ করতে পারবেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আরও ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারবেন।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে, কারণ অভিবাসন এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের খরচ প্রাথমিকভাবে খুব বেশি হতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে আপনি অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন।
এটা মনে রাখতে হবে যে, ইতালি যাওয়ার খরচ নির্ধারণে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে, কারণ গন্তব্য শহরের খরচ, বিমান সংস্থা, এবং আপনার জীবনযাত্রার ধরন একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। সঠিক সময় এবং সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি আপনার ভ্রমণ এবং বসবাসের খরচ কমাতে পারবেন।
শেংগেন ভিসা ও অন্যান্য ভিসা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য শেংগেন ভিসা প্রয়োজন। শেংগেন ভিসা একটি বহুজাতিক ভিসা সিস্টেম, যা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য একই ভিসা ব্যবস্থাকে অনুমোদন করে। এর মাধ্যমে আপনি ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবেন এবং শেংগেন অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে, শেংগেন ভিসা পাওয়া সোজা নয়, কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়।
শেংগেন ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন:
- ভিসা আবেদন ফর্ম: শেংগেন ভিসার জন্য অনলাইনে বা অফিসিয়াল দূতাবাস থেকে আবেদন করতে হবে।
- পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে তিন মাস থাকতে হবে।
- ভ্রমণের উদ্দেশ্য: আপনার যাত্রার উদ্দেশ্য যেমন পর্যটন, ব্যবসা, অথবা পড়াশোনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- ফিনান্সিয়াল প্রমাণ: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার আর্থিক সক্ষমতা আছে যা আপনার ভ্রমণ খরচ, বসবাসের খরচ এবং অন্য সব খরচের জন্য পর্যাপ্ত হবে।
- ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স: শেংগেন অঞ্চলে প্রবেশের জন্য ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক। ইনস্যুরেন্সের পরিমাণ অবশ্যই ৩০,০০০ ইউরো বা তার বেশি হতে হবে।
ভিসার প্রক্রিয়া শেষ হলে, আপনাকে কনসুলেট বা দূতাবাস থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় সাধারণত কিছু সময় লাগতে পারে, তাই ভিসার আবেদন আগেই করে ফেলা উচিত।
বৈধ কাগজপত্র এবং ইউরোপে বৈধতা
ইতালি পৌঁছানোর পর আপনার বৈধ কাগজপত্র এবং ভিসার মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি বৈধ ভিসা ছাড়া আপনি ইউরোপের অন্য কোনো দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না, তাই ইউরোপে থাকতে হলে শেংগেন ভিসার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যদি আপনি ইতালিতে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোন দেশ ভ্রমণ করতে চান, তবে শেংগেন ভিসার মাধ্যমে আপনি ইউরোপের ২৬টি দেশে অবাধে চলাচল করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ দক্ষিণ-কোরিয়ায় বোয়েসেল সার্কুলার এর তারিখ ২০২৫ ও আবেদনের নিয়ম
বাংলাদেশের প্রবাসী কমিউনিটি ও সমর্থন
ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় কমিউনিটি রয়েছে। যারা ইতালিতে বসবাস করছেন, তারা একে অপরকে সহায়তা করে এবং বাংলাদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে সেখানে নতুনদের জানায়। এখানে অনেক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট, দোকান, এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা নতুনদের জন্য উপকারী হতে পারে। এমনকি ইতালিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সমিতি এবং সংগঠন রয়েছে, যারা ভিসা, কাজ এবং অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে।
এছাড়া, ইতালির শহরগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন গ্রুপ এবং ছাত্র সংগঠনও রয়েছে। এসব গ্রুপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে এবং সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যা তাদের জীবনযাত্রা সহজতর করতে সাহায্য করে।
ইতালিতে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ
ইতালিতে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ পর্যাপ্ত। তবে, এজন্য প্রয়োজন কাজের ভিসা। আপনি যদি ইতালিতে কাজ করতে চান, তবে আপনার প্রবাসী নিবন্ধন এবং কাজের অনুমতি থাকতে হবে। বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে, যেমন:
- কৃষি খাত: ইতালির কৃষি খাতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে, বিশেষত ফলমূল এবং সবজির চাষে। এখানে মৌসুমী কর্মীদের জন্য কাজের সুযোগ অনেক বেশি।
- পর্যটন খাত: রেস্টুরেন্ট, হোটেল, এবং ট্রাভেল এজেন্সির মত সেক্টরগুলিতে বাংলাদেশিরা কাজ করতে পারেন।
- কনস্ট্রাকশন ও নির্মাণ: ইতালিতে নির্মাণ কাজেও বাংলাদেশিরা ব্যাপকভাবে যুক্ত। এই খাতে কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।
- স্বাস্থ্য খাত: ইতালিতে প্রাথমিক চিকিৎসা বা নার্সিং কর্মীদের চাহিদা রয়েছে। তবে, এখানে কাজ করতে হলে প্রফেশনাল কোর্স এবং স্থানীয় ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে।
ইতালি যাওয়ার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি
ইতালি যাওয়ার আগে কিছু অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে আপনি সেখানে যেতে এবং বসবাস করতে সুবিধাজনকভাবে শুরু করতে পারেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে:
- ইতালীয় ভাষা শিখুন: যদিও ইংরেজি কিছুটা ব্যবহৃত হয়, তবে অধিকাংশ কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতালীয় ভাষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইতালীয় ভাষা শিখলে আপনাকে সহজে কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে সহায়তা করবে।
- নগদ টাকা বা ব্যাঙ্ক একাউন্ট: ইতালি যাওয়ার আগে কিছু নগদ টাকা হাতে রাখুন। এটি কাজে লাগবে বিমানবন্দর বা প্রথম কয়েকদিনের জন্য।
- স্থানীয় বাসস্থান: ইতালি যাওয়ার আগে আপনার থাকার জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি যদি প্রথমবার ইতালি যাচ্ছেন, তাহলে একটি ভাড়ার ফ্ল্যাট বা হোটেল বুকিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- মেডিক্যাল চেকআপ: ভ্রমণের আগে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি, বিশেষত বিদেশে যাওয়ার আগে সঠিক টিকাপত্র নেওয়ার জন্য।
দেশে ফিরে আসার পর কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
আপনি ইতালিতে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ বিদেশে বসবাসের অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে অনেক পরিবর্তন আনতে পারে। আপনি যদি ইতালিতে একাধিক বছর কাটিয়ে থাকেন, তবে দেশে ফিরে আসার পর আপনার জীবনের কিছু দিক পরিবর্তন হতে পারে।
১. ভাষাগত সমস্যা: ইতালিতে থাকার সময় আপনি ইতালীয় ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, তবে দেশে ফিরে আসার পর সেই ভাষার ব্যবহার কমে যেতে পারে। যদি আপনি কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান, তবে বিদেশী ভাষার দক্ষতা আপনাকে সুবিধা দিতে পারে।
২. ফিনান্সিয়াল পরিকল্পনা: বিদেশে থেকে ফিরে আসার পর, আপনার আর্থিক পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগের পরিকল্পনাগুলি ঠিকমতো সঠিকভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। আপনি যদি ইতালিতে কোনো ব্যবসা শুরু করে থাকেন, তাহলে সেই ব্যবসার অভিজ্ঞতাকে আপনার দেশে কাজে লাগাতে পারেন।
৩. মনের প্রস্তুতি: বিদেশে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর দেশে ফিরে আসলে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন দেশে ফিরে এসে দেশের সংস্কৃতি ও পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে। তবে সময়ের সাথে আপনি আবারও নিজের পরিবেশে ফিরে আসতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার নিয়মিত আপডেট
যেহেতু আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়মিত পরিবর্তন হয়, তাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার তথ্য এবং খরচ সম্পর্কিত নিয়মিত আপডেট নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালে এই প্রক্রিয়া কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। নতুন ভিসা নীতিমালা, বিমান সংস্থার পরিবর্তন, অথবা নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কারণে ভ্রমণের খরচ এবং ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং, আপনি যদি ইতালি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে ইতালির দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।
এছাড়া, আপনি ইন্টারনেটে সহজেই আপডেট পেতে পারেন। বিভিন্ন ভ্রমণ ওয়েবসাইট, ফোরাম এবং অভিবাসন সংস্থাগুলি আপনাকে সর্বশেষ প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করতে পারে।
সাধারণত খরচের পরিসীমা (ফ্লাইট, ভিসা ও থাকা)
২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য সাধারণ খরচের পরিসীমা এইভাবে থাকতে পারে:
- ফ্লাইট খরচ: যাত্রী সংখ্যা এবং মৌসুম অনুযায়ী ফ্লাইটের খরচ প্রায় ৭০,০০০ থেকে ১২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- ভিসা আবেদন খরচ: শেংগেন ভিসা আবেদনের জন্য ৮,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
- বাড়ি ভাড়া: রোম বা মিলানে বাড়ি ভাড়া একরকমের দাম, তবে ভেনিসের মতো শহরে কিছুটা বেশি হতে পারে। একটি সাধারণ ফ্ল্যাট বা হোটেল রুমের ভাড়া ৩০০ থেকে ৮০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
- খাবার খরচ: সাপ্তাহিক খাবারের খরচ প্রায় ৫০-৭০ ইউরো হতে পারে, যদি আপনি স্থানীয় বাজারে কিনে খান।
এগুলো হলো কিছু মূল খরচের ধারণা যা আপনি আপনার ভ্রমণের জন্য প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করতে পারেন।
বিভিন্ন ফ্যাক্টর যেগুলো ভ্রমণ খরচ পরিবর্তন করতে পারে
মৌসুমের পরিবর্তন: শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালে ইতালি যাওয়ার খরচ কিছুটা বাড়ে, কারণ এই সময় পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং খরচও বৃদ্ধি পায়। শীতকালে ফ্লাইট, হোটেল এবং অন্যান্য খরচ কিছুটা কম হতে পারে।
এয়ারলাইন ও টিকিট বুকিংয়ের সময়: বিভিন্ন বিমান সংস্থার টিকিটের দাম কম বা বেশি হতে পারে, তাই যাত্রার আগে টিকিটের মূল্য তুলনা করে বুকিং করা ভাল। কিছু ক্ষেত্রে, আগে থেকেই বুকিং করলে সাশ্রয়ী হতে পারে।
বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসব: ইতালিতে বিভিন্ন উৎসব বা বড় ইভেন্টের সময়ে (যেমন ফেস্টিভ্যাল, ক্রিসমাস ইত্যাদি) যাত্রার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা করে রিজার্ভেশন করলে আপনি খরচ কমাতে পারবেন।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ
নিরাপত্তা: বিদেশে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতালিতে সাধারণত নিরাপত্তা ভাল, তবে প্রতিটি বিদেশী দেশের মতো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষত, বড় শহরগুলোতে পকেটমার এবং অন্যান্য ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে।
আরো পড়ুনঃ কি কি সমস্যা থাকলে কোরিয়া যাওয়া যায় না বিস্তারিত জানুন
স্বাস্থ্য সেবা: বিদেশে যাওয়ার আগে, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা ও ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ইতালি একটি উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পন্ন দেশ, তবে সেখানে যাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণ করা সুবিধাজনক হবে।
দীর্ঘমেয়াদী ভিসা ও বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতিতে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের জন্য কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা জরুরি। আপনি যদি ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১. পারমেসো ডি সোর্নো (Permesso di Soggiorno): ইতালিতে বসবাসের জন্য আপনাকে পারমেসো ডি সোর্নো, যা একটি বসবাসের অনুমতি পত্র, সংগ্রহ করতে হবে। এটি আপনাকে ইতালিতে বৈধভাবে বসবাস এবং কাজ করতে অনুমতি দেয়। এই অনুমতি পত্রের জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন আপনার কাজের অবস্থান বা শিক্ষা সম্পর্কিত প্রমাণ, আর্থিক স্থিতি এবং স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণ।
২. ইতালিয়ান নাগরিকত্ব: ইতালি গিয়ে আপনাকে প্রাথমিকভাবে পারমেসো ডি সোর্নো সংগ্রহ করতে হবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের পর, আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। সাধারণত, ইতালিতে ১০ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে কম সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।
৩. কাজের অনুমতি: ইতালিতে কাজ করার জন্য আপনার কিছু নির্দিষ্ট কাজের অনুমতি প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে, আপনি কাজের জন্য ভিসা পেতে পারবেন যদি কোনো ইতালিয়ান কোম্পানি আপনাকে চাকরি দেয়। এই ভিসা প্রক্রিয়ায় নিয়মিত কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তাই এজন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে সর্বশেষ তথ্য নেওয়া উচিত।
অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা
ইতালি পৌঁছানোর পর, শহরের অভ্যন্তরে চলাফেরা করতে বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা আপনার সুবিধার জন্য উপস্থিত। আপনি যদি এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করতে চান, তবে ট্রেন, বাস বা ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। ইতালি ইউরোপের অন্যতম উন্নত ট্রেন নেটওয়ার্ক ধারণকারী দেশ এবং ট্রেনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে অনেক সুবিধা।
ট্রেনের ব্যবস্থা:
- ইটালিয়ান ট্রেন কোম্পানি যেমন Trenitalia এবং Italo, এই দুইটি মূল ট্রেন সেবা প্রদান করে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে দ্রুত এবং সুবিধাজনক ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। বিশেষ করে রোম, মিলান, নেপলস, এবং ফ্লোরেন্সের মধ্যে ট্রেনের সেবা অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং দ্রুত।
বাস ও মেট্রো:
- শহরের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বাস ও মেট্রো সুবিধা রয়েছে। বড় শহরগুলিতে মেট্রো ব্যবস্থাও সাশ্রয়ী ও সহজতর যাতায়াতের উপায়।
ভাড়া গাড়ি:
- আপনি চাইলে ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করে সহজেই শহরের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন। এটি একদিক থেকে স্বাচ্ছন্দ্যময়, তবে শহরের ট্রাফিক বিবেচনা করে কিছুটা সময় লাগে।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা
ইতালির সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ধরন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং বিশেষভাবে আপনার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সাহায্য করবে। ইতালি একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ যেখানে বিভিন্ন উৎসব এবং ইতিহাস রয়েছে। ইতালির ফুড কালচার খুবই সমৃদ্ধ, যেখানে পিজ্জা, পাস্তা এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার অনেক বিখ্যাত।
সংস্কৃতি:
- ইতালির জনগণ তাদের ঐতিহ্য, শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। রোম, ভেনিস, মিলান, এবং ফ্লোরেন্সের মতো শহরগুলি বিশ্বখ্যাত শিল্পকলা এবং স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। আপনি এসব শহরে ভ্রমণ করে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
অভ্যন্তরীণ জীবনযাত্রা:
- ইতালির জীবনযাত্রার স্টাইল খুবই প্রশান্তিপূর্ণ। রোজকার জীবনে মানুষ কাজের পর নিজেদের পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে এবং শহরের বিভিন্ন পাবলিক স্পেসে অনেক সময় অতিবাহিত করে। রোম, মিলান এবং অন্যান্য বড় শহরে অভ্যন্তরীণ জীবনযাত্রা বেশ ব্যস্ত এবং আধুনিক, তবে গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রা অনেক শান্ত এবং সহজ।
ইতালি ভ্রমণ ও পর্যটন আকর্ষণ
ইতালি পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, এবং সেখানে আপনি বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতে পাবেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান:
- কলোসিয়াম (Colosseum): রোমের অন্যতম জনপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রাচীন রোমের অঙ্গীকার এবং আজও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
- ভেনিস: পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক শহরগুলোর একটি। ভেনিসের খাল এবং ঐতিহ্যবাহী ভাসমান হোটেলগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়।
- ফ্লোরেন্স: শিল্পকলা এবং রেনেসাঁর কেন্দ্র। ফ্লোরেন্সের গ্যালারী এবং স্থাপত্যের ডিজাইন পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত।
- দ্য আল্পস: বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি। স্কিইং এবং হাইকিং প্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান।
বাংলাদেশি সম্প্রদায় এবং সামাজিক যোগাযোগ
ইতালিতে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী সম্প্রদায় বিদ্যমান, এবং সেখানে আপনার নতুন বন্ধু বা সহকর্মী খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ। বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে খুবই সহযোগিতামূলক। আপনি যদি এককভাবে বিদেশে গিয়ে থাকেন, তবে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা আপনাকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা প্রদান করতে পারেন।
তাছাড়া, বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অনেক সংগঠন রয়েছে যেগুলি বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবস ও উৎসব পালন করে, যেমন ঈদ, নববর্ষ ইত্যাদি। এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করলে আপনি আপনার দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি আরও সংযুক্ত থাকতে পারবেন এবং নতুন জীবনযাত্রায় মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার খরচ এবং প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করে আমরা বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছি। এখানে যদি আপনি ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনার খরচের পরিসীমা, ভিসা প্রক্রিয়া, ফ্লাইটের খরচ এবং অন্যান্য বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি একটি সফল ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ দক্ষিণ কোরিয়া লটারি আবেদন করার নিয়ম ২০২৫
এছাড়া, সমস্ত ভ্রমণ খরচ সম্পর্কিত তথ্য এবং অভ্যন্তরীণ দিকগুলি সময়মত আপডেট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি আপনার ভ্রমণ বাজেট এবং জীবনযাত্রার জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত আছেন। বাংলাআরটিকেল.কম এর সম্পূর্ণ পোস্টি পরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আরো জানতে ক্লিক করুন
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url