বিয়ে করা কি ফরজ? ইসলাম কি বলে জানুন

ইসলামের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা মানুষের জীবনের প্রতিটি দিককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নীতিমালা প্রদান করেছে। এর মধ্যে বিয়ে অন্যতম। বিয়ে কেবল দুটি ব্যক্তির একত্রিত হওয়ার সামাজিক চুক্তি নয়; বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

বিয়ে করা কি ফরজ? ইসলাম কি বলে জানুন

বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা ও তার গুরুত্ব কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। তবে প্রশ্ন আসে, "বিয়ে করা কি ফরজ নাকি সুন্নাত?" এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ইসলামের উৎসসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

বিয়ের গুরুত্ব কুরআনের ভুমিকাঃ

পোস্ট সুচিপত্রঃপবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:"তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পন্ন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা উপযুক্ত, তাদেরও। যদি তারা গরিব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ সীমাহীন দানশীল ও সর্বজ্ঞ। (সুরা আন-নূর: ৩২) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি নির্দেশ দেয় যে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:

"তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"
(সুরা আর-রূম: ২১) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, বিয়ে মানুষের জন্য শান্তি ও মানসিক প্রশান্তির উৎস।

বিয়ে সংক্রান্ত হাদিস

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"বিয়ে আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।"
(সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫০৬৩) এখানে বিয়েকে রাসূলের সুন্নত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুন্নত মানে রাসূলের আদর্শ, যা অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

"যখন কেউ এমন ব্যক্তিকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দ্বীনদারী ও চরিত্রে তুমি সন্তুষ্ট, তখন তাকে বিবাহ দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।"
(তিরমিজি, হাদিস: ১০৮৪) এই হাদিসে বিয়েকে ফিতনা থেকে বাঁচার একটি উপায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ত দোয়া ও শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

বিয়ের ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নত হওয়া নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর

ইসলামে বিয়ে কখনো ফরজ, কখনো ওয়াজিব, কখনো সুন্নত এবং কখনো হারাম হতে পারে। এটি ব্যক্তির অবস্থা ও প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে।

১. বিয়ে ফরজ যখন: যদি কারও মধ্যে এমন প্রবণতা থাকে যে, সে বিয়ে না করলে জিনা বা অন্য হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন তার জন্য বিয়ে ফরজ।

২. বিয়ে ওয়াজিব যখন: যদি কেউ বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে এবং তার জন্য বিয়ে করা আবশ্যক হয় যাতে হারাম কাজ থেকে বাঁচা যায়, তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।

৩. বিয়ে সুন্নত যখন: যদি কারও মধ্যে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার ভয় না থাকে এবং সে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তবে তার জন্য বিয়ে করা সুন্নত।

৪. বিয়ে হারাম যখন: যদি কারও বিয়ে করার দ্বারা অন্য কারো ক্ষতি বা অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে বিয়ে তার জন্য হারাম হতে পারে।

বিয়ের উদ্দেশ্য

ইসলামে বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো:

  • মানসিক, শারীরিক ও আত্মিক শান্তি অর্জন।
  • দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর আদেশ পালন করা।
  • হারাম কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
  • নেক সন্তান লাভ করা এবং উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
তোমরা এমন স্ত্রীকে বিয়ে করো, যারা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম এবং ভালো চরিত্রের অধিকারী, কারণ আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্যে গর্ব করব।
(আবু দাউদ, হাদিস: ২০৫০)

বর্তমান সমাজে বিয়ের গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে বিয়ের গুরুত্ব আরো বেশি। জিনার হার বৃদ্ধি, সামাজিক অবক্ষয়, এবং হারাম সম্পর্কের কারণে সমাজে নানা ধরণের অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। ইসলামের বিয়ের নীতিমালা মেনে চললে এসব সমস্যা থেকে সমাজকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।

বিয়েতে কাজী অফিসের ভূমিকা

কাজী অফিস বিয়ে নিবন্ধন এবং বৈধতা প্রদানের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং বিয়েকে আইনি, সামাজিক, এবং ধর্মীয় দিক থেকে সুরক্ষিত করার মাধ্যম। এছাড়াও কাজী অফিস নিম্নে উল্লেখিত দায়িত্ব গুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  • বিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্ব
  • বিবাহে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ
  • মেয়ের অভিভাবকের (ওয়ালির) ভূমিকা নিশ্চিত করা
  • আইনি সুরক্ষা

বিবাহে আর্থিক বিষয়গুলোর রেকর্ড রাখা বিয়ে নিয়ে ভুল ধারণা

কিছু মানুষ মনে করে, বিয়ে কেবলমাত্র আর্থিক সচ্ছলতার পরেই করা উচিত। তবে এই ধারণা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
যদি তারা গরিব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন।
(সুরা আন-নূর: ৩২)

উপসংহার

ইসলামে বিয়েকে ইবাদত ও সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়। এটি কখনো ফরজ, কখনো ওয়াজিব, কখনো সুন্নত হিসেবে পালিত হয়, যা ব্যক্তির অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বিয়ে শুধু একটি পারিবারিক চুক্তি নয়; বরং এটি একটি মহান ইবাদত এবং মানব জীবনের পূর্ণতা।

আরো পড়ুনঃ ঋণ থেকে কোরবানি আদায় হবে কি না: বিস্তারিত বিশ্লেষণ

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন এবং বিয়েকে আমাদের জন্য কল্যাণময় করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url