চুলের যত্নে নারিকেল তেল নাকি সরিষার তেল: কোনটি ভালো এবং কেন?
চুলের যত্নে তেল ব্যবহারের প্রচলন প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। চুলকে স্বাস্থ্যবান, মসৃণ, এবং কোমল রাখতে তেল অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তেল চুলের গোড়া থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়, চুলের শুষ্কতা কমায় এবং চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
বর্তমান সময়ে চুলের যত্নে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরনের তেল বাজারে পাওয়া যায়, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত দুইটি তেল হলো নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল। উভয় তেলই আলাদা গুণাগুণ এবং উপকারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে, যা বিভিন্ন প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে চুলের যত্নে কার্যকর হতে পারে।
চুলের যত্নে তেলের ভূমিকা
চুলের যত্নে তেল ব্যবহারের প্রচলন বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। চুলের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। তেল চুলকে মসৃণ, কোমল, এবং শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক পুষ্টি প্রদান করে। নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুলে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমে যায়। তেল চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলের গোড়াকে মজবুত করতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তেল চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। তাই চুলের দৈনন্দিন যত্নে তেল ব্যবহারের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
পোস্ট সুচিপত্রঃ চুলের যত্নে নারিকেল তেলবর্তমান বাজারে চুলের যত্নে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায়, তবে নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল উভয়ই আলাদা আলাদা গুণাবলি এবং উপকারিতা নিয়ে আসে। নারিকেল তেল হালকা প্রকৃতির এবং এটি সহজেই চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের গভীরে প্রবেশ করে চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ রাখে। নারিকেল তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মাথার ত্বকের খুশকি এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। খুশকি দূর করা ছাড়াও এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে চুল পড়ার সমস্যা কমে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে, সরিষার তেল চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এবং এটি প্রাচীনকাল থেকেই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরিষার তেল চুলের গোড়ায় শক্তি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং প্রোটিন চুলকে পুষ্টি দেয় এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়।
সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চুলের রং ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং চুলকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে কালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও সরিষার তেল মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে, যা চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
এখন প্রশ্ন হলো, নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল, এই দুইটির মধ্যে কোনটি আপনার চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো? এর উত্তর নির্ভর করে আপনার চুলের ধরন, ত্বকের অবস্থা এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। যদি আপনার চুল খুব শুষ্ক হয় এবং দ্রুত ভেঙে পড়ে, তাহলে নারিকেল তেল ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে।
এটি চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি দেয় এবং শুষ্কতা দূর করে। তবে যদি আপনার চুলের বৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে চান, তাহলে সরিষার তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই তেলটি চুলের গঠন মজবুত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
আরো পড়ুনঃ ২৫টি মেয়েদের রূপচর্চার সঠিক পদ্ধতি: বিস্তারিত গাইডলাইন
চুলের যত্নে নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল উভয়ই ব্যবহৃত হতে পারে। অনেকে উভয় তেলের মিশ্রণ ব্যবহার করেন যাতে উভয়ের উপকারিতা পাওয়া যায়। নিয়মিত ব্যবহারে নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল চুলের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
নারিকেল তেলের উপকারিতা
১. চুলের ময়েশ্চারাইজার: নারিকেল তেল চুলের জন্য এক প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের গঠনকে শক্তিশালী করে এবং শুষ্কতা দূর করে।
২. ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান: নারিকেল তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখে।
৩. চুলের বৃদ্ধির গতি বাড়ায়: নারিকেল তেল মাথার ত্বকে ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৪. খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর: খুশকি বা চুলের গোড়ার শুষ্কতা দূর করতে নারিকেল তেল খুবই কার্যকর।
সরিষার তেলের উপকারিতা
১. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: সরিষার তেল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা চুলের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য: সরিষার তেলে এমন উপাদান রয়েছে যা ফাঙ্গাল এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কার্যকর।
৩. প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন: সরিষার তেলে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন উপাদান রয়েছে, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করে।
৪. চুলের পতন রোধে সহায়ক: সরিষার তেলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং এটি চুলের পতন রোধে সাহায্য করে।
কোন তেলটি ব্যবহার করবেন?
আপনার চুলের ধরন এবং চুলের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে আপনি নারিকেল তেল বা সরিষার তেল বেছে নিতে পারেন। যদি আপনার চুল শুষ্ক এবং খুশকি সমস্যায় ভোগে, তাহলে নারিকেল তেল ব্যবহার করা ভালো। তবে যদি আপনার চুল পড়ে বেশি এবং খুশকি প্রতিরোধ করতে চান, তবে সরিষার তেল কার্যকরী হতে পারে।
মিশ্রণ হিসেবে ব্যবহারের সুবিধা
অনেকে নারিকেল এবং সরিষার তেল মিশিয়ে ব্যবহার করেন। এটি একটি ভালো পদ্ধতি কারণ এতে দুই তেলের গুণাগুণ একসঙ্গে পাওয়া যায়। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে শক্তিশালী করে।
তেল ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
১. মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন: তেল লাগানোর সময় মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. গরম তেল ব্যবহার করুন: হালকা গরম তেল ব্যবহার করলে তেল মাথার ত্বকে সহজে প্রবেশ করে।
৩. রাতে তেল লাগান: রাতে তেল লাগিয়ে ঘুমালে এটি চুলে আরও ভালোভাবে শোষিত হয়।
চুলের যত্নে নারিকেল তেল এবং সরিষার তেলের উপকারিতা আলাদা হলেও উভয় তেল চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত তেল ব্যবহারের উপকারিতা
চুলের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত তেল ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুলে নিম্নলিখিত উপকারিতা পাওয়া যায়:
১. চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে: নিয়মিত তেল ব্যবহার চুলকে আর্দ্র এবং কোমল রাখে, বিশেষত শুষ্ক আবহাওয়ায় চুলকে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে।
২. চুলের গঠন মজবুত করে: তেলে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান চুলের গঠনকে মজবুত করে এবং ভাঙন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. চুলের ভঙ্গুরতা কমায়: তেল ব্যবহার করলে চুলের প্রান্ত ফাটার প্রবণতা কমে যায় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
৪. চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়: নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে, যা চুলকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
৫. চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে: নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং চুল পড়ার হার কমে।
আরো পড়ুনঃ লেবু দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার কার্যকরী উপায়
চুলে তেল লাগানোর কিছু পরামর্শ
সঠিকভাবে তেল ব্যবহার চুলের জন্য উপকারী হতে পারে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো যা চুলে তেল লাগানোর ক্ষেত্রে কার্যকর:
১. মাথার ত্বকে তেল ভালোভাবে লাগান: মাথার ত্বকে তেল লাগানোর সময় আঙুলের মাথা দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং তেল সহজে শোষিত হয়।
২. তেল লাগানোর পর কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন: তেল লাগানোর পর অন্তত ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন, যাতে তেল ভালোভাবে চুল এবং ত্বকে শোষিত হতে পারে। আরও ভালো হয় যদি সারা রাত তেল রেখে সকালে ধুয়ে ফেলেন।
৩. তেল ধোয়ার জন্য মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন: তেল ধোয়ার সময় মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সঠিক তেল বেছে নেওয়ার উপায়
আপনার চুলের ধরন এবং সমস্যা অনুযায়ী তেল বেছে নেওয়া উচিত। কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হলো যা আপনাকে সঠিক তেল বেছে নিতে সাহায্য করবে:
১. শুষ্ক চুলের জন্য: শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুলের জন্য নারিকেল তেল সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি চুলের গভীরে প্রবেশ করে এবং ময়েশ্চারাইজ করে।
২. তেলতেলে ত্বকের জন্য: যাদের মাথার ত্বক তেলতেলে, তারা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে।
৩. খুশকির সমস্যা থাকলে: খুশকির সমস্যার জন্য নারিকেল এবং সরিষার তেলের মিশ্রণ ভালো কাজ করে। খুশকি দূর করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. চুলের বৃদ্ধির জন্য: চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সরিষার তেল এবং তিলের তেল কার্যকর। এগুলি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
চুলের যত্নে তেলের পাশাপাশি অন্যান্য উপায়
তেল চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, তেলের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত যত্ন এবং অভ্যাস চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি দেওয়া হলো যা চুলকে আরও শক্তিশালী এবং সুন্দর করে তুলতে পারে:
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন: চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, এবং বায়োটিন সমৃদ্ধ খাদ্য চুলের জন্য উপকারী। মাছ, ডিম, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, এবং ফলমূল খেলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: পর্যাপ্ত পানি পান চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক। এতে চুলের শুষ্কতা কমে এবং চুল স্বাস্থ্যবান থাকে। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৩. চুলের অতিরিক্ত তাপ এড়িয়ে চলুন: হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার এবং কার্লার প্রায়শই ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ফলে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই, চুলের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় যতটা সম্ভব প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকানোর অভ্যাস করুন।
৪. হালকা এবং প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন: চুল পরিষ্কার রাখার জন্য প্রাকৃতিক এবং কেমিক্যাল মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। এতে চুলের প্রাকৃতিক তেল বজায় থাকে এবং চুলের ক্ষতি কমে যায়।
৫. চুল কাটার অভ্যাস গড়ে তুলুন: নিয়মিত চুলের প্রান্ত ছাঁটলে চুলের ডগা ফাটার প্রবণতা কমে। সাধারণত প্রতি দুই থেকে তিন মাস পর পর চুল ছাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৬. ঘুমের সময় সিল্ক বা স্যাটিন বালিশের কাভার ব্যবহার করুন: সিল্ক বা স্যাটিন বালিশের কাভার ব্যবহারে চুলে কম ঘর্ষণ হয় এবং চুল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কমে।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের মুখের ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায়
ঋতু অনুযায়ী চুলের যত্ন
চুলের জন্য ঋতুভিত্তিক যত্নও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:
শীতকালে: শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে চুলও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শীতকালে নিয়মিত তেল ব্যবহার এবং ময়েশ্চারাইজিং হেয়ার মাস্ক লাগানো উচিত।
গ্রীষ্মকালে: গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম এবং সূর্যের রশ্মি চুলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এই সময়ে সানস্ক্রিন যুক্ত তেল ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মাথা ঢেকে রাখা ভালো।
বর্ষাকালে: বর্ষাকালে চুল আর্দ্র হয়ে যাওয়ায় ফাঙ্গাল সংক্রমণ হতে পারে। এই সময়ে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত তেল যেমন সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
তেলের প্রাকৃতিক বিকল্প
কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও তেলের বিকল্প হিসেবে চুলের যত্নে ব্যবহার করা যায়:
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা চুলে আর্দ্রতা যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল চুলে প্রাকৃতিক ময়েশ্চার যোগায় এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়।
অ্যাভোকাডো মাস্ক: অ্যাভোকাডো চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
চুলের যত্নে সামগ্রিক উপসংহার
চুলের যত্নে নারিকেল তেল, সরিষার তেল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের ভূমিকা অপরিসীম। চুলের প্রয়োজন এবং চুলের ধরন বুঝে নিয়মিত তেল প্রয়োগ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার চুলকে স্বাস্থ্যবান, সুন্দর এবং মজবুত রাখতে সহায়ক। চুলের যত্ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এর জন্য ধৈর্য ও সঠিক যত্ন প্রয়োজন। তাই সঠিক তেল এবং পরিচর্যার মাধ্যমে আপনার চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন।
চুলের যত্নে সপ্তাহভিত্তিক রুটিন
চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সঠিক যত্নের পাশাপাশি একটি রুটিন মেনে চলাও জরুরি। সপ্তাহের বিভিন্ন দিন চুলের যত্নে আলাদা আলাদা কাজ করলে চুলের গঠন মজবুত হয় এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যাও কমে। নিচে একটি সাধারণ সপ্তাহভিত্তিক রুটিন দেওয়া হলো:
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা এবং চুলের জন্য মেথির গুনাগুন
চুলের সমস্যা অনুযায়ী অতিরিক্ত যত্ন
অনেক সময় চুলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের রঙ হারানো বা ভঙ্গুরতা। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু বিশেষ যত্ন নেওয়া যেতে পারে:
চুল পড়া রোধে: অতিরিক্ত চুল পড়া হলে পেঁয়াজের রস চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে সালফার থাকে, যা চুলের গঠন মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।
চুলের রঙ ফিরিয়ে আনতে: অকালপক্বতা রোধ করতে আমলকির তেল বা হেনা পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চুলের রঙ ধরে রাখা যায় এবং চুলকে আরও স্বাস্থ্যবান করা যায়।
ভঙ্গুরতা কমাতে: যদি চুল খুব বেশি ভেঙে যায় তবে প্রোটিন সমৃদ্ধ মাস্ক যেমন ডিম এবং মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করুন। এটি চুলে প্রাকৃতিক প্রোটিন যোগায় এবং চুলকে মজবুত করে।
চুলের যত্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করুন: চুলের জন্য কেমিক্যালযুক্ত পণ্য কম ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপাদান বেশি ব্যবহার করুন। এটি চুলের ক্ষতি রোধ করে।
চুল খুব বেশি বাঁধবেন না: চুল খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে চুলের গোড়ায় চাপ পড়ে, যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে। তাই, ঢিলেঢালা করে চুল বাঁধুন।
ঘন ঘন চুল আঁচড়ান: প্রতিদিন অন্তত দুইবার চুল আঁচড়ান। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলে প্রাকৃতিক তেল সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়।
স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন: স্ট্রেস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই নিয়মিত মেডিটেশন, ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম আপনার স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হবে, যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করবে।
উপসংহার
নারিকেল তেল এবং সরিষার তেল উভয়ই চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। চুলের ধরন, সমস্যা, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এই তেলগুলো বেছে নেওয়া উচিত। যদি আপনি নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতিতে তেল ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার চুল হয়ে উঠবে সুস্থ, মজবুত এবং উজ্জ্বল। তেল ব্যবহারের সাথে সাথে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিচর্যাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সঠিক তেল বেছে নিয়ে নিয়মিত চুলে প্রয়োগ করুন এবং উপভোগ করুন আপনার চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! বাংলাআরটিকেল.কম এর সম্পূর্ণ পোস্টি পরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আরো জানতে ক্লিক করুন
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url