ইলিশ মাছের ডিম: উপকারিতা এবং সুস্বাদু রান্নার সহজ রেসিপি

আমারা বাঙালিরা সবাই ইলিশ মাছ খেতে অনেক পসন্দ করে থাকে। আর তার সাথে যদি ইলিশ মাছের দিম হয় তাহলে আমাদের বাঙালি দের তাহলে তো কোন কথাই নেই।

ইলিশ মাছের ডিম: উপকারিতা এবং সুস্বাদু রান্নার সহজ রেসিপি

পোস্ট সুচিপত্রঃ ইলিশ মাছের ডিমতাই আপনি যদি ইলিশ মাছের ডিমের বরা খেতে চান আর আপনি জদি না জেনে থাকেন ইলিশ মাছের বরা কিভাবে রান্না করে হয় তাহলে আজকের এই পস্টি আপনার জন্য। তাহলে চলুন ইলিশ মাছের ডিমের রেসেপি জেনে নেই 

ভুমিকা

ইলিশ মাছের ডিম বাঙালি খাদ্যসংস্কৃতির একটি অন্যতম মূল্যবান অংশ এবং এর পুষ্টিগুণে ভরপুর। ইলিশ মাছ যেমন বাঙালির কাছে সুস্বাদু ও জনপ্রিয়, ঠিক তেমনি এর ডিমও সমানভাবে আকর্ষণীয়।

 ইলিশ মাছের ডিমে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক। 

এটি হার্টের জন্য উপকারী, মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পুষ্টিগুণ ছাড়াও ইলিশের ডিম নানা রকমের সুস্বাদু রেসিপিতে রান্না করা যায়, যা বাঙালিদের রসনাকে তৃপ্ত করে। উৎসব বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ইলিশের ডিমের পদ এক আলাদা স্বাদ ও বিশেষত্ব যোগ করে। 

অতএব, ইলিশ মাছের ডিম কেবল একটি খাদ্য নয়; এটি বাঙালির ঐতিহ্য ও স্বাদবোধের অন্যতম পরিচায়ক।

ইলিশ মাছের ডিম: উপকারিতা এবং সুস্বাদু রান্নার সহজ রেসিপি

ইলিশ মাছের ডিম বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রিয় একটি খাদ্য উপাদান, যা শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এর ডিমে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য অসাধারণ উপকারী বলে বিবেচিত। ইলিশ মাছের ডিমে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, 

ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক। ইলিশের ডিম নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ হয় এবং এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ, মস্তিষ্কের বিকাশ, 

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং হাড় মজবুত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা ইলিশ মাছের ডিমের বহুবিধ উপকারিতা এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রেখে কীভাবে সহজে এটি রান্না করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ইলিশ মাছের ডিমের পুষ্টিগুণ

ইলিশ মাছের ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২ এবং আয়রন। এই উপাদানগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

  1. প্রোটিন: ইলিশ মাছের ডিম প্রোটিনের দারুণ উৎস, যা পেশী গঠনে সাহায্য করে।
  2. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: এটি হার্টের জন্য ভালো এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  3. ভিটামিন বি১২: স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং রক্তের সুস্থতা বজায় রাখে।
  4. আয়রন: রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়ক, যা অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা

ইলিশ মাছের ডিম খাওয়ার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়:

  1. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে: এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য খুবই উপকারী।
  2. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: ইলিশ মাছের ডিমে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  3. ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: এতে উপস্থিত ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলো শরীরের ইমিউনিটি শক্তিশালী করে।

ইলিশ মাছের ডিম রান্নার রেসিপি

ইলিশ মাছের ডিম রান্না করার অনেক রেসিপি রয়েছে। এখানে আমরা সহজ একটি রেসিপি শেয়ার করছি, যা খুবই সুস্বাদু এবং সহজে তৈরি করা যায়।

উপকরণ:

  • ইলিশ মাছের ডিম – ২০০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ
  • কাঁচা মরিচ কুচি – ৩-৪টি
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • তেল – ২ টেবিল চামচ
  • ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. প্রথমে ইলিশ মাছের ডিম ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
  2. একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন বাটা দিয়ে হালকা বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  3. এরপর কাঁচা মরিচ, হলুদ ও ধনে গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  4. এবার ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে ভালোভাবে মসলা মিশিয়ে দিন। লবণ দিন এবং কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করুন।
  5. ডিমের পানি শুকিয়ে এলে ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ইলিশ মাছের ডিম খাওয়া শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে, বিশেষত যাঁরা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে আগ্রহী তাঁদের জন্য এটি একটি চমৎকার খাদ্যবস্তু। এর পুষ্টিগুণ হৃদরোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার কাজে সাহায্য করে। এছাড়া এটি সহজে রান্না করা যায় এবং রান্নার সময় খুব বেশি মসলার প্রয়োজনও হয় না, তাই এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।

ইলিশ মাছের ডিমের আরও কিছু রান্নার প্রস্তাবনা

ইলিশ মাছের ডিম শুধুমাত্র ভাজা বা তরকারিতে নয়, অন্যান্য বিভিন্ন পদ্ধতিতেও রান্না করা যায়। নিচে আরও কিছু জনপ্রিয় রান্নার পদ্ধতি দেয়া হলো যা আপনার পরিবারের জন্য সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হতে পারে।

ইলিশ মাছের ডিম ভর্তা

উপকরণ:

  • ইলিশ মাছের ডিম – ২০০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
  • কাঁচা মরিচ কুচি – ৩-৪টি
  • সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • ধনেপাতা কুচি – সামান্য

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. ইলিশ মাছের ডিম হালকা করে সেদ্ধ করে নিন।
  2. এরপর সেদ্ধ ডিমের সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, সরিষার তেল এবং লবণ মিশিয়ে ভালো করে চটকে নিন।
  3. উপর থেকে ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন। এটি গরম ভাতের সাথে খুবই সুস্বাদু লাগে।

ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে ডাল রান্না

উপকরণ:

  • মসুর ডাল – ১ কাপ
  • ইলিশ মাছের ডিম – ১৫০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ
  • কাঁচা মরিচ – ৩-৪টি
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • ধনে পাতা – সাজানোর জন্য
  • লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালী:

  1. প্রথমে ডাল ধুয়ে আধা সেদ্ধ করে নিন।
  2. তারপর একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজুন।
  3. সেদ্ধ ডাল ও ইলিশ মাছের ডিম মিশিয়ে দিন এবং মসলাগুলো ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  4. ৫-১০ মিনিট ঢেকে রেখে রান্না করুন।
  5. রান্না শেষ হলে ধনেপাতা ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

আরো পড়ুনঃ দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি এবং বাড়িতে মুরগি পালনের সঠিক উপায়

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ইলিশ মাছের ডিমের ভূমিকা

নিয়মিত ইলিশ মাছের ডিম খাওয়া শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে যা স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য অনেক উপকারী। হার্টের সুরক্ষা থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ইলিশ মাছের ডিম সহজলভ্য এবং কম খরচে পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।

ইলিশ মাছের ডিম সংরক্ষণের পদ্ধতি

ইলিশ মাছের ডিম বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে এবং এটি একটি মৌসুমী খাদ্য হিসেবে বেশি পরিচিত। সাধারণত বর্ষাকালে ইলিশ মাছের প্রজনন সময় হওয়ায় এ সময়েই ডিম পাওয়া যায় এবং এই সময়ে ইলিশের ডিম সহজলভ্য থাকে। 

বাঙালির কাছে ইলিশ মাছের ডিমের স্বাদ যেমন প্রিয়, তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি, তাই সহজলভ্য মৌসুমে অনেকে ভবিষ্যতের জন্য ডিম সংরক্ষণ করতে আগ্রহী হন। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে ইলিশ মাছের ডিম দীর্ঘ সময় তাজা রাখা সম্ভব হয়, 

যা পরবর্তীতে বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা যায়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করলে ডিমের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে এবং এতে ডিমের স্বাদেও পরিবর্তন আসতে পারে। সংরক্ষণের জন্য প্রথমে ইলিশ মাছের ডিম ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয় এবং পানি সম্পূর্ণরূপে ঝরিয়ে ফেলতে হয়। এরপর ডিমগুলোকে হালকা লবণ মাখিয়ে একটি এয়ারটাইট ব্যাগে বা পাত্রে রেখে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে এটি দীর্ঘদিন ভালো থাকে। 

এই প্রক্রিয়াটি ইলিশের ডিমকে ৬ মাস পর্যন্ত তাজা রাখতে সহায়ক, এবং যখনই এটি ব্যবহার করতে হবে, তখন ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে ডিফ্রস্ট করা যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের গুণগত মান ঠিক রাখতে সংরক্ষণের সময় সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে রাখা উচিত। সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি জানলে ইলিশ মাছের ডিম সারা বছর উপভোগ করা যায় এবং এটি রান্নায় মজাদার স্বাদ নিয়ে আসে।

ইলিশ মাছের ডিম সংরক্ষণ করার ধাপ:

  1. ডিম পরিষ্কার করা: প্রথমে ডিম পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। পানি দিয়ে ধোয়ার পর তা ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
  2. লবণ মাখানো: ডিমগুলোতে সামান্য লবণ মাখিয়ে নিতে পারেন। লবণ সংরক্ষণের জন্য সহায়ক এবং এটি ডিমকে দীর্ঘ সময় টাটকা রাখতে সাহায্য করে।
  3. হিমায়িত করা: ইলিশ মাছের ডিম সংরক্ষণের সর্বোত্তম উপায় হলো হিমায়িত করে রাখা। পরিষ্কার ও শুকনো অবস্থায় ডিমগুলোকে একটি এয়ারটাইট ব্যাগ বা পাত্রে রেখে ফ্রিজারে রাখুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে ডিম প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
  4. ব্যবহারের আগে ডিফ্রস্ট করা: ব্যবহারের আগে ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ডিফ্রস্ট করতে হবে। ডিম নরম হলে রান্না করা শুরু করুন।

ইলিশ মাছের ডিম নিয়ে কিছু সতর্কতা

ইলিশ মাছের ডিম খাওয়া যতটা উপকারী, ততটাই কিছু সতর্কতাও মেনে চলা উচিত। কারণ অতিরিক্ত ইলিশের ডিম খেলে কিছু সমস্যার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

  1. অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন: ইলিশ মাছের ডিমে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই যারা উচ্চ কোলেস্টেরল সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি।
  2. অ্যালার্জি সমস্যা: কিছু মানুষের ইলিশের ডিমে অ্যালার্জি হতে পারে। এমন কেউ থাকলে এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  3. গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা: গর্ভাবস্থায় সব ধরনের সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

ইলিশ মাছের ডিম সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

অনেকেই ইলিশ মাছের ডিম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন। নিচে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া হলো:

১. ইলিশ মাছের ডিম কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী?

হ্যাঁ, ইলিশ মাছের ডিমে থাকা প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

২. ইলিশ মাছের ডিম কীভাবে খাবারে ভিন্নতা আনতে পারে?

ইলিশ মাছের ডিম বিভিন্ন রকমের রেসিপিতে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন ভর্তা, ভাজা, কারি, এবং ডালের সাথে মিশিয়ে। এই ভিন্নতাগুলো খাবারে বৈচিত্র্য আনতে পারে।

৩. ইলিশ মাছের ডিম কি ওজন কমাতে সহায়ক?

ইলিশ মাছের ডিমে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকায় এটি খিদে কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ এতে চর্বি রয়েছে যা বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তে পারে।

ইলিশ মাছের ডিম এবং বাঙালি সংস্কৃতি

ইলিশ মাছ এবং এর ডিম শুধুমাত্র পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি রাঁধুনিদের হাতের ছোঁয়ায় ইলিশের ডিমের রান্নায় এক অনন্য স্বাদ সৃষ্টি হয়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে ইলিশ মাছের ডিমের পদ একটি বিশেষ আকর্ষণ। ইলিশ এবং এর ডিম নিয়ে এমনই এক অনুরাগ রয়েছে যে, এটি যেন বাঙালির আবেগের একটি প্রতিচ্ছবি।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ইলিশ মাছের ডিমের রান্নায় এলাকাভিত্তিক ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা সাধারণত ডিমের ভর্তা বা ঝোল রান্না করেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মশলাদার পদ প্রাধান্য পায়। ইলিশ মাছের ডিম রাঁধার এই বৈচিত্র্যময় পদ্ধতি প্রমাণ করে বাঙালি সংস্কৃতির ভোজন রসিকতা এবং বিভিন্ন স্বাদে মিশ্রিত হওয়ার ঐতিহ্য।

স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য ইলিশ মাছের ডিমের বিকল্প রান্না

স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা প্রায়ই ইলিশ মাছের ডিম খেতে আগ্রহী হলেও অতিরিক্ত চর্বি এড়াতে চান। তাদের জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প রান্নার প্রস্তাব দেওয়া হলো:

  1. ভাপে রান্না করা ইলিশ ডিম: কম তেল ব্যবহার করে ভাপে ইলিশ ডিম রান্না করা একটি চমৎকার পদ্ধতি। এতে ডিমের পুষ্টি অটুট থাকে এবং চর্বির পরিমাণও কম থাকে।
  2. ডিমের ঝোল: গাঢ় মশলা এড়িয়ে, অল্প মশলা দিয়ে ইলিশ মাছের ডিমের হালকা ঝোল তৈরি করা যায়। এতে চর্বি কম থাকে এবং এটি হজমেও সহজ।
  3. গ্রিল করা ইলিশ ডিম: ডিমের পিসগুলো হালকা মশলা মাখিয়ে ওভেনে গ্রিল করলে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর একটি পদ পাওয়া যায়।

ইলিশ মাছের ডিমের প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

ইলিশ মাছের ডিম নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে যা এখানে আলোচনা করা হলো:

  1. ইলিশের ডিম খেলে ওজন বাড়ে: যদিও ইলিশের ডিমে ফ্যাট রয়েছে, তবে নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি হয় না। বরং প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি শরীরের সুস্থতায় সহায়ক।
  2. শুধুমাত্র ভাজার মাধ্যমেই ইলিশ ডিম সুস্বাদু হয়: ইলিশ ডিম রান্নার জন্য ভাজার বিকল্প রয়েছে যা একই রকম সুস্বাদু হতে পারে।
  3. গর্ভাবস্থায় ইলিশ ডিম খাওয়া ক্ষতিকর: গর্ভাবস্থায় ইলিশের ডিম খাওয়া ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

ইলিশ মাছের ডিমের আন্তর্জাতিক বাজার এবং প্রভাব

ইলিশ মাছের ডিমের চাহিদা শুধু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও এক জনপ্রিয় পণ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঙালি কমিউনিটি বেড়ে যাওয়ার ফলে ইলিশের চাহিদাও বেড়েছে। বিভিন্ন উৎসবে প্রবাসী বাঙালিরা ইলিশ এবং ইলিশের ডিমের পদ তৈরি করে নিজেদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন।

আরো পড়ুনঃ ঠান্ডা কাশির জন্য তুলসী পাতা সেবনের সঠিক উপায় জানুন

উপসংহার

ইলিশ মাছের ডিম শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এই ডিম নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সহজ হবে। তবে পরিমিতি মেনে খাওয়া এবং কিছু সতর্কতা মেনে চলা আবশ্যক। ইলিশ মাছের ডিমের ভিন্নতায় পূর্ণ রেসিপি এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি জানার মাধ্যমে এটির উপভোগ বাড়ানো সম্ভব। সঠিকভাবে ইলিশ মাছের ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা আমাদের স্বাস্থ্য এবং রসনাকে সমৃদ্ধ করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url