কিসমিস কিভাবে খাবেন? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিস কিভাবে খাবেন? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব পরিচিত একটি শুকনো ফল। এটি শুধুমাত্র মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয় নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিসমিস খাওয়ার নানা উপায় রয়েছে, তবে এটি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে শরীরের জন্য তা আরও উপকারী হতে পারে। আসুন জেনে নিই কিসমিস খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি, এর উপকারিতা এবং কিছু ক্ষতিকর দিক। আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন

কিসমিস কিভাবে খাবেন? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিস কী?

কিসমিস মূলত আঙুর শুকানোর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। আঙুর শুকানোর পর এর মিষ্টতা বেড়ে যায় এবং এর পুষ্টিমানও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে।

কিসমিস খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি

পানিতে ভিজিয়ে কিসমিস খাওয়া

কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে উপকারী উপায় হলো এটি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিসমিসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এটি শরীরে দ্রুত শোষিত হয়।

কিসমিস কীভাবে খাবেন?

কিসমিস খাওয়ার অনেক উপায় আছে এবং প্রতিদিন এটি খেলে আপনি অনেক উপকার পেতে পারেন। নিচে কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হলো:

  1. পানি ভিজিয়ে খাওয়া: কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি সহজেই শরীরে মিশে যায়। সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে খেলে ভালো হয়। আপনি রাতের বেলায় ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।

  2. সরাসরি খাওয়া: কিসমিস সরাসরি শুকনো অবস্থায়ও খাওয়া যেতে পারে। এটি মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই এটি স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পছন্দ করেন।

  3. সালাদ বা দইয়ের সাথে: কিসমিস সালাদ, দই, বা ওটমিলের সাথে মিশিয়ে খেলে এর স্বাদ আরও বাড়ে এবং পুষ্টিগুণও বৃদ্ধি পায়।

  4. দুধের সাথে মিশিয়ে: দুধের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেলে এটি দুধের পুষ্টিগুণও বাড়ায় এবং শক্তি বাড়ায়।

আরো পড়ুনঃ কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

  1. শক্তি বৃদ্ধি করে: কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। এটি বিশেষ করে যারা ব্যায়াম বা ভারী কাজ করেন তাদের জন্য উপকারী।

  2. হজমের উন্নতি: কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

  3. রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়ক: এতে রয়েছে আয়রন, কপার এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

  4. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি: কিসমিসে ক্যালসিয়াম ও বোরন রয়েছে, যা হাড়ের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  5. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: কিসমিসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।

  6. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

  1. ওজন বৃদ্ধি: কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করা অনেক বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

  2. দাঁতের সমস্যা: কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষয় হতে পারে, যদি আপনি দাঁত পরিষ্কার না করেন।

  3. অতিরিক্ত ফাইবারের কারণে হজমের সমস্যা: অনেক বেশি কিসমিস খেলে অতিরিক্ত ফাইবারের কারণে পেটের সমস্যা, গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে।

  4. শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

কিভাবে ভিজিয়ে খাবেন:

  • রাতে ঘুমানোর আগে ১০-১৫টি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • সকালে খালি পেটে এই কিসমিসগুলো খেয়ে ফেলুন এবং সেই পানি পান করুন।

এই পদ্ধতিতে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং হজম শক্তি বাড়ে।

সরাসরি কিসমিস খাওয়া

অনেকেই সরাসরি কিসমিস খেতে পছন্দ করেন। এটি কোনও সমস্যা নয়, তবে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। খাবারের পরে কিসমিস খেলে এটি দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে এনার্জি দেয়।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

১. শক্তির উৎস

কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ) দ্রুত এনার্জি প্রদান করে। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য কিসমিস একটি ভালো স্ন্যাকস হতে পারে।

২. হজম শক্তি উন্নত করে

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সহায়ক। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত কিসমিস খেলে পেটের সমস্যা কমে যায়।

৩. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে।

৪. হাড়ের শক্তি বাড়ায়

কিসমিসে ক্যালসিয়াম ও বোরন উপাদান থাকে, যা হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজ পরবর্তী সময়ে হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী।

৫. ত্বক এবং চুলের জন্য ভালো

কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও, কিসমিসে থাকা ভিটামিন সি এবং আয়রন চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

যদিও কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

১. ওজন বৃদ্ধি

কিসমিসে প্রচুর ক্যালরি এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য পরিমিত পরিমাণে কিসমিস খাওয়া উচিত।

২. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা

যেহেতু কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিসমিসের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

৩. দাঁতের ক্ষতি

কিসমিসের মিষ্টি এবং চটচটে স্বভাবের কারণে এটি দাঁতে আটকে থাকতে পারে, যা দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে। তাই কিসমিস খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি।

কিসমিসের পুষ্টিগুণ

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিসমিসে প্রধানত যে পুষ্টিগুণগুলো পাওয়া যায় তা হলো:

১. প্রাকৃতিক চিনি

কিসমিসে থাকা গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ শরীরকে তাৎক্ষণিক এনার্জি দেয়। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা দ্রুত এনার্জির প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য কিসমিস একটি দারুণ স্ন্যাকস হতে পারে।

২. ফাইবার

কিসমিসে থাকা ফাইবার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং পেটের সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে যায়।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য রোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।

৪. ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান

কিসমিসে ভিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ ঘি খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নাকি ক্ষতিকারক? জানুন সত্যিটা

কিসমিসের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. কোলেস্টেরল কমায়

কিসমিসে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হার্টের জন্য উপকারী এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

২. ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে

কিসমিসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীরকে ঠান্ডা, কাশি, এবং অন্যান্য ভাইরাসজনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

৩. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে

কিসমিসে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম শরীরে স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এটি মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

কিসমিস খাওয়ার কিছু সতর্কতা

যদিও কিসমিসের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবুও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত:

১. পরিমিত মাত্রায় খাওয়া

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়ার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।

২. সংরক্ষণ এবং হাইজিন

কিসমিস সংরক্ষণ করার সময় এটি শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থানে রাখা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে খোলা রেখে দিলে এতে ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. অ্যালার্জি

অনেকের ক্ষেত্রে কিসমিস অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। যদি কিসমিস খাওয়ার পর শরীরে কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কিসমিসের ব্যবহার: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উপায়

কিসমিসকে শুধুমাত্র শুকনো ফল হিসেবে খাওয়ার পরিবর্তে আপনি এটি বিভিন্ন উপায়ে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কিসমিসের পুষ্টিগুণ পেতে এটি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যায়।

১. মিষ্টি পদের সাথে

কিসমিসের মিষ্টি স্বাদ বিভিন্ন মিষ্টি পদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পায়েস, পুডিং, কেক, এবং মিষ্টি পোলাওতে কিসমিস যোগ করলে স্বাদ আরও বেড়ে যায়।

২. সালাদে কিসমিস

যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা কিসমিসকে তাদের সালাদে ব্যবহার করতে পারেন। এটি সালাদের সাথে মিশিয়ে খেলে মিষ্টি এবং টক-মিষ্টি ফ্লেভার যুক্ত হয়, যা খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে।

৩. স্মুদি বা দুধের সাথে

কিসমিস দুধ বা স্মুদির সাথে খাওয়া গেলে এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট হিসেবে, কিসমিস এবং বাদামের সাথে দুধের স্মুদি তৈরি করা যায়।

৪. ওটমিল বা সিরিয়ালের সাথে

সকালের নাশতায় ওটমিল বা সিরিয়ালের সাথে কিসমিস যোগ করতে পারেন। এটি আপনার নাশতার পুষ্টিমূল্য বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে এনার্জি বজায় রাখে।

কিসমিস: শিশুরা এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী

১. শিশুর জন্য উপকারিতা

শিশুদের জন্য কিসমিস অত্যন্ত উপকারী। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। শিশুরা সাধারণত মিষ্টি স্বাদের খাবার পছন্দ করে, তাই কিসমিস তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।

২. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারিতা

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিসমিস একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান থাকে, যা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। এছাড়া, এটি হজম সমস্যা কমাতে সহায়ক এবং শরীরে এনার্জি বজায় রাখে।

কিসমিসের বাজারে প্রাপ্যতা এবং সঠিক সংরক্ষণ

বাজারে কিসমিস সহজলভ্য এবং এটি বিভিন্ন আকার এবং স্বাদে পাওয়া যায়। তবে কিসমিস কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।

১. অর্গানিক কিসমিস নির্বাচন

যারা প্রাকৃতিক এবং রাসায়নিকমুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করেন, তারা অর্গানিক কিসমিস নির্বাচন করতে পারেন। অর্গানিক কিসমিসে কোনো প্রকার রাসায়নিক বা প্রিজারভেটিভ থাকে না, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা

২. সঠিকভাবে সংরক্ষণ

কিসমিস শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। এটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে পারলে ভালো হয়, কারণ খোলা অবস্থায় রাখলে এটি আর্দ্র হয়ে যেতে পারে এবং পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভবতীরা কত খাবেন?

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিসমিস খাওয়া অত্যন্ত উপকারী, তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, গর্ভবতীরা দিনে ২০-২৫টি কিসমিস খেতে পারেন। তবে কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে বা গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস আছে, তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিসমিসের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।

কিসমিস খাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো পানিতে ভিজিয়ে রাখা। রাতে ১০-১৫টি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়।

কিসমিসের দাম কত?

কিসমিসের দাম ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ড, গুণমান, এবং আকারের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। সাধারণত বাজারে কিসমিসের দাম প্রতি কিলোগ্রামে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

যদি আপনি অর্গানিক বা উচ্চমানের কিসমিস কিনতে চান, তবে দাম আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন অঞ্চলে এবং দোকানে কিসমিসের দামের কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে।

সঠিক দাম জানতে আপনার নিকটস্থ দোকান বা অনলাইন শপে খোঁজ নিতে পারেন।

কিসমিস ক্যালরি কত?

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে। সাধারণত ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ২৯৯ ক্যালরি থাকে। এই ক্যালরি মূলত গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের মতো প্রাকৃতিক চিনি থেকে আসে, যা শরীরকে দ্রুত এনার্জি দেয়।

তবে কিসমিস খাওয়ার সময় এর ক্যালরির পরিমাণ মাথায় রাখা উচিত, বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের জন্য।

কিসমিসে প্রোটিন কত?

কিসমিসে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। সাধারণত ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যদিও এটি প্রোটিনের প্রধান উৎস নয়, কিসমিসের অন্যান্য পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আরো পড়ুনঃ করমচা পুষ্টিগুণ এবং করমচা খাওয়ার উপকারিতা জানুন

তবে, আপনি যদি প্রোটিনের ভালো উৎস খুঁজছেন, তাহলে বাদাম বা অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কিসমিসের সাথে মিলিয়ে খেতে পারেন। এভাবে আপনি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে পারবেন এবং শক্তিও পাবেন!

উপসংহার

কিসমিস শুধু মিষ্টি স্বাদ এবং নাস্তার জন্যই নয়, বরং এর পুষ্টিগুণের জন্যও একটি মূল্যবান শুকনো ফল। এটি সঠিক পরিমাণে খেলে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা আয়রন, ফাইবার বা এনার্জির ঘাটতি পূরণ করতে চান তাদের জন্য। যদিও কিসমিসের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবুও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই কিসমিস খাওয়ার সময় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url