কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো? বিস্তারিত জানুন

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো? বিস্তারিত জানুন

কিডনি আমাদের শরীরের এমন একটি অপরিহার্য অঙ্গ, যা বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনির কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ এটি আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কিডনির কর্মক্ষমতা সঠিক আছে কিনা, তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কিডনি সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা প্রায়ই ‘কিডনি পয়েন্ট’ বা নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এই প্যারামিটারগুলির মধ্যে অন্যতম হল GFR (গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট) এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। আরো জানতে ক্লিক করুন

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো? বিস্তারিত জানুন

কিডনি পয়েন্ট বা এই মানদণ্ডগুলো কিডনির কার্যকারিতা সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয়। GFR হলো কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা পরিমাপ করার একটি মানদণ্ড, যা কিডনি কতটা ভালোভাবে রক্ত থেকে বর্জ্য বের করছে তা নির্দেশ করে। একটি স্বাস্থ্যবান কিডনির জন্য GFR ৯০ বা তার ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। যদি এই মান কমে যায়, তবে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে আসতে পারে, যা সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে, রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। ক্রিয়েটিনিন হলো শরীরের পেশী থেকে নির্গত একটি বর্জ্য পদার্থ, যা কিডনি দ্বারা ফিল্টার হয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেশি থাকলে তা কিডনির কার্যক্ষমতার অবনতির লক্ষণ হতে পারে।

পোস্ট সুচিপত্রঃকিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, তা নির্ভর করে একাধিক ফ্যাক্টরের উপর। একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে GFR ৯০ বা তার উপরে থাকা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই মান কিছুটা কমতে পারে। GFR ৬০-৮৯ থাকলে কিডনিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, কিন্তু GFR ৩০-৫৯ হলে কিডনির মাঝারি ক্ষতি হয়েছে এবং বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। GFR ১৫-২৯ হলে কিডনি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে। GFR ১৫ এর নিচে নেমে গেলে কিডনি সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে, যাকে কিডনি ফেইলিওর বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ কোমরে ব্যথা মানেই কি কিডনির সমস্যা? বিস্তারিত জানুন

সুতরাং, কিডনি পয়েন্ট বা এই প্যারামিটারগুলো পর্যবেক্ষণ করে কিডনির সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব হয়। কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে কিডনির ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনির পয়েন্ট কী?

কিডনির পয়েন্ট বলতে মূলত ক্রিয়েটিনিন এবং গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট (GFR)-এর মাত্রাকে বোঝানো হয়, যা কিডনির কার্যকারিতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। GFR হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কিডনি কতটা সঠিকভাবে রক্তকে পরিশোধন করছে তা নির্ধারণ করে। ক্রিয়েটিনিন হলো পেশী থেকে নির্গত একটি রাসায়নিক, যা কিডনি দ্বারা ফিল্টার করে শরীর থেকে বের করে দেয়া হয়। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনি রোগের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

স্বাস্থ্যকর কিডনির ক্ষেত্রে GFR-এর মান সাধারণত ৯০ বা তার বেশি হওয়া উচিত। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মান স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কমে যেতে পারে। GFR-এর মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা পাঁচটি ধাপে ভাগ করা হয়:

  1. ধাপ ১ (GFR ≥ ৯০): এই পর্যায়ে কিডনি পুরোপুরি সুস্থ থাকে এবং কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয় না।
  2. ধাপ ২ (GFR ৬০-৮৯): কিডনিতে হালকা ক্ষতি হতে পারে, তবে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
  3. ধাপ ৩ (GFR ৩০-৫৯): কিডনিতে মাঝারি ধরণের ক্ষতি ঘটে এবং লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।
  4. ধাপ ৪ (GFR ১৫-২৯): কিডনি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
  5. ধাপ ৫ (GFR < ১৫): এই পর্যায়ে কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে যায়, যা কিডনি ফেইলিওর হিসেবে পরিচিত।

ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কত হলে ভালো?

কিডনির কার্যকারিতা নির্ধারণে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাও গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ০.৬ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এবং মহিলাদের জন্য ০.৫ থেকে ১.১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত। তবে এদের মাত্রা বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য শারীরিক কারণের উপর নির্ভর করতে পারে।

কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি ভালো রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেয়া হলো:

  1. পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনিকে বর্জ্য পরিশোধন করতে সহায়তা করে।
  2. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: লবণ এবং প্রোটিনের অতিরিক্ত গ্রহণ কিডনির উপর চাপ ফেলে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  3. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা জরুরি।
  4. রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে, তাই এদের নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: কিডনির সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয়, তাই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষার মাধ্যমে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

কিডনি সমস্যার লক্ষণ

কিডনির কার্যকারিতার কোনো সমস্যা হলে এর কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় এই লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না, ফলে সমস্যাটি জটিল হয়ে ওঠে। তাই নিচের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি:

  1. শরীরে ফোলাভাব: কিডনি সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে মুখমণ্ডল, হাত-পা, পায়ের গোড়ালি ইত্যাদি ফুলে যেতে পারে।

  2. প্রস্রাবের সমস্যা: প্রস্রাবের রঙ, গন্ধ, এবং ঘনত্ব পরিবর্তন হতে পারে। প্রস্রাবে ফেনা, রক্ত, বা অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকলে সতর্ক হওয়া উচিত।

  3. শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা: কিডনি রোগের কারণে শরীরে বর্জ্য জমা হতে থাকে, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় কোনো কারণ ছাড়াই সবসময় দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

  4. বমি বা বমি বমি ভাব: বর্জ্য পদার্থ সঠিকভাবে শরীর থেকে বের না হলে এটি পাকস্থলীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে, যার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।

  5. ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি: কিডনি সঠিকভাবে ফিল্টার না করলে শরীরে টক্সিন জমা হয়, যা ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।

কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কারণ

কিডনি রোগের ঝুঁকি কিছু নির্দিষ্ট কারণের জন্য বেশি হতে পারে। সঠিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো কমানো সম্ভব। কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কিছু কারণ নিম্নরূপ:

  1. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস হলো কিডনি ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

  2. উচ্চ রক্তচাপ: দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

  3. বংশগত কারণ: পারিবারিক ইতিহাসে কিডনি রোগ থাকলে এটি বংশগতভাবে প্রভাবিত হতে পারে এবং এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

  4. ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান কিডনির কার্যকারিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

  5. ওজনাধিক্য: অতিরিক্ত ওজন কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। ওজনাধিক্যজনিত অন্যান্য রোগ, যেমন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপও কিডনি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে এই ব্যবস্থা নেওয়া হলে কিডনি রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কিডনি রোগ প্রতিরোধের কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো:

  1. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো: বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা বংশগত কিডনি রোগের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত GFR এবং ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা উচিত।

  2. সুষম খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে। লবণ, চিনি এবং চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত।

  3. পর্যাপ্ত পানি পান করা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা কিডনির জন্য উপকারী। এটি শরীরের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখে।

  4. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা: ধূমপান এবং মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করে, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত।

  5. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

  6. রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাযথ ওষুধ গ্রহণ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা জরুরি।

কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি সমস্যার ধরন ও মাত্রার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার ধরন নির্ধারিত হয়। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

  1. ঔষধ গ্রহণ: কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে ডাক্তার সাধারণত ঔষধ প্রয়োগ করেন, যা কিডনির ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঔষধ খুব কার্যকর। এছাড়াও, কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

  2. ডায়ালাইসিস: কিডনির কার্যকারিতা ১৫% এর নিচে নেমে এলে, ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে যান্ত্রিকভাবে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল বের করা হয়। ডায়ালাইসিস দুই ধরনের হতে পারে:

    • হিমোডায়ালাইসিস: এ পদ্ধতিতে রোগীর রক্ত শরীরের বাইরে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়।
    • পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে পেটের অভ্যন্তরে একটি ক্যাথেটারের মাধ্যমে তরল প্রবেশ করিয়ে কিডনি বর্জ্য পরিশোধন করা হয়।
  3. কিডনি প্রতিস্থাপন: কিডনি সম্পূর্ণভাবে কাজ না করলে এবং ডায়ালাইসিস দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না হলে, কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যবান দাতা থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি প্রতিস্থাপন একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কিডনিতে সমস্যা হলে লক্ষণগুলো কী কী এবং কীভাবে সচেতন থাকবেন?

কিডনি রোগের মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

কিডনি রোগ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামাজিকভাবেও রোগীর উপর প্রভাব ফেলে। রোগীরা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং হতাশায় ভোগেন। দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস বা অন্যান্য চিকিৎসা গ্রহণ করা রোগীর জীবনে বেশ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কাজের ক্ষমতা কমে যাওয়া, সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং আর্থিক চাপ রোগীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ধরনের মানসিক চাপ কমাতে পরিবারের সহায়তা ও প্রয়োজনীয় মানসিক পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার পাশাপাশি মানসিক সাপোর্ট রোগীকে কিডনি রোগের সাথে লড়াই করার শক্তি প্রদান করতে পারে।

কিডনি সম্পর্কে ভুল ধারণা

কিডনি রোগ এবং এর চিকিৎসা নিয়ে অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এসব ভুল ধারণা থেকে দূরে থাকা এবং সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন। কিছু সাধারণ ভুল ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

  1. সব কিডনি রোগই চিরস্থায়ী: কিডনি রোগের সব প্রকারই চিরস্থায়ী নয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে কিডনি সুস্থ হতে পারে।

  2. ডায়ালাইসিসই একমাত্র সমাধান: ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলেও, কিডনি প্রতিস্থাপন একটি কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রতিস্থাপনের সুযোগের উপর।

  3. প্রচুর পানি পান করলে কিডনি রোগ এড়ানো যায়: পানি পান করা কিডনির জন্য ভালো হলেও, অতিরিক্ত পানি পান করা সবসময় কার্যকর হয় না। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে পানি ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়, যা আরও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পানি পানের মাত্রা পরিবর্তন করা উচিত নয়।

কিডনি রোগীদের খাদ্যাভ্যাস

কিডনি রোগীদের জন্য একটি বিশেষ খাদ্য তালিকা মেনে চলা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস কিডনির উপর চাপ কমায় এবং রোগের অগ্রগতি কমিয়ে দেয়। নিচে কিডনি রোগীদের জন্য কিছু খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হলো:

  1. লবণ কম খাওয়া: লবণ কিডনির উপর চাপ বাড়ায় এবং রক্তচাপ বাড়াতে পারে, যা কিডনি রোগকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে। তাই লবণ কমিয়ে খাবার গ্রহণ করা উচিত।

  2. প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির ক্ষতি বাড়াতে পারে। তাই মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

  3. ফসফরাস এবং পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ: ফসফরাস এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, দুধ, চকলেট ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, কারণ কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে এই খনিজগুলো জমা হয়ে ক্ষতি করতে পারে।

  4. পানি নিয়ন্ত্রণ: কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে পানি জমতে পারে, যা ফোলাভাব তৈরি করতে পারে। তাই পানি গ্রহণের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

আরো পড়ুনঃ কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের কোন অংশে ব্যথা হয়? বিস্তারিত জানুন

উপসংহার

কিডনি রোগ একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে, তবে সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলে এর প্রতিরোধ সম্ভব। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। মানসিকভাবে শক্ত থাকা, পরিবার এবং চিকিৎসকের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা কিডনি রোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিডনি রোগের ঝুঁকি এড়াতে, প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা। GFR এবং ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা যাচাই করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url