কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের কোন অংশে ব্যথা হয়? বিস্তারিত জানুন
কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের কোন অংশে ব্যথা হয়? বিস্তারিত জানুন
কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে। কিডনি মূলত শরীর থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ এবং অপ্রয়োজনীয় পানি বের করে দেয়, যা শরীরকে সুস্থ রাখে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরে লবণের মাত্রা সঠিকভাবে সমন্বয় করে। আরো জানতে ক্লিক করুন
এ ছাড়া, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও কিডনির ভূমিকা আছে, যা শরীরের কোষগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। তবে, কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বা তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, তখন শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে। কিডনির সমস্যার কারণে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব হতে পারে, যা রোগীকে ভীষণ কষ্ট দেয়।
পোস্ট সুচিপত্রঃসাধারণত, কিডনি অসুস্থ হলে পিঠের নিচের অংশে, কোমরে, বা তলপেটে ব্যথা দেখা যায়। তাছাড়া, কিডনিতে পাথর জমলে বা ইনফেকশন হলে মূত্রনালীতে চাপ পড়ে এবং তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। এসব ব্যথার প্রকৃতি অনেক সময় তীব্র থেকে মৃদু হতে পারে এবং এটি শরীরের একপাশে বা দুই পাশেই অনুভূত হতে পারে। তাই, কিডনির যেকোনো সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুনঃ ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো কি কি এবং ব্রেইন ক্যান্সারের প্রতিকার
কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত এবং দৈনন্দিন জীবনে পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্য গ্রহণ, এবং সঠিক জীবনযাপনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। কিডনির যত্ন নেওয়া না হলে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার দিকে গড়াতে পারে, যা পরবর্তীতে কিডনি ফেইলিউরের কারণ হতে পারে। তাই কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সচেতন জীবনযাপন এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ
কিডনির অসুখের প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই বিশেষ কোনো লক্ষণ অনুভব করেন না। তবে সময়ের সাথে সাথে কিছু লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন:
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
- মূত্রে ফেনা বা রক্তের উপস্থিতি
- শরীরের অঙ্গে ফুলে যাওয়া
- চেহারায় ফোলাভাব
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
এসব লক্ষণগুলো সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে এগুলো ছাড়াও কিডনি অসুস্থ হলে ব্যথা কোথায় এবং কিভাবে হয় তা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।
কিডনির অসুখে কোথায় ব্যথা হয়?
কোমরের নিচে এবং পিঠে ব্যথা
কিডনির সমস্যা থাকলে সাধারণত কোমরের নিচে এবং পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়। কিডনি শরীরের পিছনের দিকে কোমরের নিচের অংশে অবস্থিত, তাই এই জায়গায় ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। ব্যথাটি সাধারণত একপাশে বা উভয় পাশে হতে পারে এবং তীব্র বা মৃদু হতে পারে। অনেক সময় এটি পাথর বা কিডনি ইনফেকশনের কারণে হয়।
তলপেটে ব্যথা
কিডনির অসুখে তলপেটে ব্যথা দেখা যেতে পারে। কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন থাকলে মূত্রনালীর উপর চাপ পড়ে, যার ফলে তলপেটেও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত আকস্মিকভাবে শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
পাশের দিকে ব্যথা
কিডনির অসুখের কারণে শরীরের একপাশে বা দুই পাশে তীব্র ব্যথা দেখা যায়। বিশেষ করে কিডনিতে পাথর থাকলে পাশের দিকে এই ব্যথা দেখা দিতে পারে। মূত্রনালীর মাধ্যমে পাথর নামতে শুরু করলে এই ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে।
কিডনির ব্যথা চিহ্নিত করার উপায়
ব্যথার ধরণ বোঝা
কিডনির ব্যথা সাধারণত গভীর এবং ধারালো হয়। এটি অনেক সময় পিঠ থেকে তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। যদি ব্যথা তীব্র হয় এবং হঠাৎ করে শুরু হয়, তবে এটি কিডনিতে পাথরের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, ধীরে ধীরে শুরু হওয়া ব্যথা কিডনির দীর্ঘমেয়াদী অসুখের লক্ষণ হতে পারে।
ব্যথার সাথে অন্যান্য লক্ষণ
কিডনির ব্যথার সাথে কিছু অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে যা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যেমন:
- মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া
- মূত্রে রক্ত
- তীব্র মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জ্বর
কিডনি ব্যথার কারণ
কিডনি পাথর
কিডনিতে পাথর জমে গেলে তা মূত্রনালীতে প্রবেশের চেষ্টা করে, যার ফলে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে তলপেট এবং পাশের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কিডনি ইনফেকশন
কিডনি ইনফেকশন বা পাইলোনেফ্রাইটিসের কারণে পিঠে এবং কোমরের দিকে ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ইনফেকশনের ফলে মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা দেখা দিতে পারে।
কিডনি ফেইলিউর
যখন কিডনি সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন কিডনি ফেইলিউর ঘটে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হতে পারে। কিডনি ফেইলিউরের কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য জমা হতে শুরু করে, যা শরীরের অঙ্গে ফোলাভাব এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।
কিডনি ব্যথার প্রতিকার
পর্যাপ্ত পানি পান করা
কিডনি সুস্থ রাখতে এবং কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করতে প্রচুর পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক উপায়
কিডনির সমস্যা কমানোর জন্য লেবুর রস, আপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো মূত্রনালীর মাধ্যমে পাথর বের হতে সহায়তা করে।
ডাক্তারের পরামর্শ
কিডনিতে তীব্র ব্যথা হলে বা কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করলে এবং নিয়মিত চেকআপ করালে কিডনির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কিডনি সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় অভ্যাস
কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আমাদের কিছু সাধারণ অভ্যাস মেনে চলা উচিত। এই অভ্যাসগুলো কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং কিডনির যে কোনো ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। নিচে এমন কিছু অভ্যাস তুলে ধরা হলো:
১. সুষম খাদ্যগ্রহণ
কিডনির সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্যগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, লবণ এবং চর্বির মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এমন খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়াও কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের হাঁটা বা ব্যায়াম কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ কমায়।
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
ধূমপান এবং অ্যালকোহল কিডনির কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে পারে। এগুলো কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কিডনির সমস্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। তাই কিডনির সুস্থতার জন্য ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ কেমোথেরাপি: কী, কেন এবং কিভাবে দেওয়া হয়? বিস্তারিত জানুন
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম কম হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো কিডনিও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
উচ্চ রক্তচাপ কিডনির বড় শত্রু। রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্যগ্রহণ, এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
কিডনির অসুখের ঝুঁকি কারা বেশি বহন করে?
কিছু নির্দিষ্ট মানুষ কিডনির অসুখের ঝুঁকি বেশি বহন করে। নিচে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. ডায়াবেটিস রোগীরা
ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা কিডনি ফেইলিউর পর্যন্ত গড়াতে পারে।
২. উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা
উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিডনির রক্তবাহী নালীতে চাপ পড়ে এবং তা ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং তা কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। স্থূলতা কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ায় এবং রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বাড়ায়।
৪. ধূমপায়ীরা
ধূমপান কিডনির রক্তপ্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির সঠিক কার্যক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করে। ধূমপানের কারণে কিডনিতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনি অসুখ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস
কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। কিছু খাদ্য এমন রয়েছে যা কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে বিশেষ সহায়তা করে:
১. ফাইবারযুক্ত খাবার
ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং শাকসবজি কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। এগুলো রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ কমায়।
২. কম লবণযুক্ত খাবার
লবণ কম খাওয়া কিডনির ওপর চাপ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে প্রসেসড ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলোতে অতিরিক্ত লবণ থাকে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান
পানি কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় এবং কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।
৪. তাজা ফলমূল
কিডনির জন্য উপকারী এমন কিছু ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, এবং তরমুজ উল্লেখযোগ্য। এসব ফল কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে।
কিডনি রোগের চিকিৎসা: প্রাথমিক এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি
কিডনি রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার প্রকারভেদ এবং অবস্থার উপর। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা গেলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আসুন কিডনি রোগের প্রাথমিক এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি সমস্যার চিকিৎসা সাধারণত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে করা হয়। এসময় চিকিৎসক রোগীকে কিছু জীবনধারা পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন, যেমন:
কম লবণযুক্ত খাদ্যাভ্যাস: কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম লবণযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রচুর পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়।
ওষুধ সেবন: ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসক তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে পরামর্শ দেন। এগুলো কিডনির উপর চাপ কমায় এবং কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি
যদি কিডনি সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় কোনো সাড়া না পাওয়া যায়, তবে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়ালাইসিস: কিডনি সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি বের করা হয়। এটি মূলত দুই ধরনের হয়:
- হেমোডায়ালাইসিস: একটি মেশিনের মাধ্যমে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নেওয়া হয়।
- পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস: পেটের অভ্যন্তরে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা তরল দিয়ে বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নেওয়া হয়।
কিডনি প্রতিস্থাপন: কিডনির কার্যক্ষমতা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে এবং ডায়ালাইসিসেও কোনো উন্নতি না হলে কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র বিকল্প হয়ে ওঠে। এসময় একজন সুস্থ দাতার কিডনি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বায়োপসি ও অন্যান্য পরীক্ষা: কিডনির রোগের কারণ এবং অবস্থার বিশদ বিশ্লেষণের জন্য কিডনি বায়োপসি এবং অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। এটি রোগ নির্ণয়ে এবং সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার কারণ: বিস্তারিত বিশ্লেষণ
কিডনি সুস্থ রাখতে কিছু ঘরোয়া টিপস
কিডনির যত্ন নেওয়া একেবারে বাড়িতেই শুরু করা যায়। কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব। যেমন:
ডান্ডেলিয়ন চা: ডান্ডেলিয়ন চা প্রাকৃতিক ডাইউরেটিক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনি পরিষ্কারে সহায়তা করে। এটি নিয়মিত পান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
লেবুর রস: লেবুর রস কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমায় এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
মধু ও আদার রস: মধু এবং আদার রস কিডনির ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। আদার রসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ, যা কিডনির প্রদাহ কমাতে পারে।
অলিভ অয়েল: কিডনি পাথর নির্গত করতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল। এটি প্রাকৃতিকভাবে মূত্রনালীতে পাথরের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
কিডনি সমস্যার প্রতিরোধে ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শ
কিডনির সমস্যা প্রতিরোধে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে কিডনির সমস্যার আগাম লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা যায়। এতে ডাক্তারের নির্দেশিত কিছু পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, এবং আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়ে থাকে।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা: রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিডনির কার্যক্ষমতা নির্দেশ করে। নিয়মিত এই পরীক্ষা করলে কিডনির অবস্থার সঠিক মূল্যায়ন করা যায়।
পোস্ট মূত্রনালীর পরীক্ষা: মূত্রনালীর মাধ্যমে কিডনিতে কোনো বাধা রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করতে এই পরীক্ষা করা হয়। এতে কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের কার্যক্ষমতা জানা যায়।
সচেতন জীবনযাপন এবং কিডনির যত্ন
কিডনি সুস্থ রাখতে হলে সচেতন জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সহজ পরিবর্তন যেমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে কিডনি রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মতো কিডনিও যত্নের দাবি রাখে। তাই কিডনির যত্ন নিতে আজ থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।
উপসংহার
কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা দেখা দিতে পারে এবং এটি অবহেলা করলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কিডনির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্যগ্রহণ, এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং কিডনি সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিনের কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কিডনি সুস্থ থাকলে জীবনযাত্রা অনেক সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url