হার্নিয়া থেকে বাঁচার উপায়: ঝুঁকি, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
হার্নিয়া থেকে বাঁচার উপায়: ঝুঁকি, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
হার্নিয়া একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা শরীরের অভ্যন্তরে মাংসপেশি বা টিস্যুর দুর্বলতার কারণে ঘটে। এর কারণে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু শরীরের বাহিরে বেরিয়ে আসে। হার্নিয়া সাধারণত পেটের অংশে হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। হার্নিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকলে এটি প্রতিরোধ করা সহজ হতে পারে। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা হার্নিয়ার লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। বাংলা আরটিক্যান বিষয় জানতে এখানে ক্লিক করুন,
হার্নিয়া কী এবং কীভাবে ঘটে?
হার্নিয়া হল একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু মাংসপেশি বা টিস্যুর দুর্বল জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এটি সাধারণত পেটের দেয়ালে বা তলপেটে ঘটে। হার্নিয়ার প্রকারভেদ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন ইনগুইনাল হার্নিয়া, ফিমোরাল হার্নিয়া, আম্বিলিকাল হার্নিয়া ইত্যাদি।
হার্নিয়ার প্রকারভেদ:
- ইনগুইনাল হার্নিয়া: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের হার্নিয়া। এটি মূত্রথলির কাছে বা তলপেটের অংশে ঘটে।
- ফিমোরাল হার্নিয়া: এই ধরনের হার্নিয়া বেশি হয় নারীদের মধ্যে, বিশেষ করে গর্ভধারণের পর।
- আম্বিলিকাল হার্নিয়া: এটি সাধারণত নবজাতকদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।
- হায়াটাল হার্নিয়া: এটি যখন হয় তখন পেটের উপরের অংশ ডায়াফ্রামের ফাঁক দিয়ে বুকে চলে আসে।
হার্নিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ
হার্নিয়ার লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে, এবং এর উপস্থিতি অনেক সময় পরিষ্কার বুঝা যায় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা হার্নিয়ার বিষয়ে সতর্ক সংকেত দিতে পারে:
- ফোলাভাব বা অস্বাভাবিক স্ফীতি: শরীরের কোনো অংশে, বিশেষ করে পেটের দেয়ালে বা তলপেটে ফোলাভাব দেখা দিলে তা হার্নিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- ব্যথা বা অস্বস্তি: হার্নিয়া আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে কাশি বা ভারী বস্তু তোলার সময়।
- জ্বালাপোড়া অনুভব: কিছু ক্ষেত্রে হার্নিয়ার কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
- হজমে সমস্যা: হায়াটাল হার্নিয়া হলে বুকজ্বালা, অম্বল বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
হার্নিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ
হার্নিয়া হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থাকতে পারে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
- জিনগত দুর্বলতা: যদি পরিবারের কারও আগে হার্নিয়া হয়ে থাকে তবে আপনারও এই ঝুঁকি থাকতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন: শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে পেটের দেয়ালের উপর চাপ বেশি পড়ে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- গর্ভধারণ: গর্ভধারণের সময় পেটের অভ্যন্তরে চাপ বেড়ে যায়, যা নারীদের হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ভারী বস্তু তোলা: অতিরিক্ত ভারী বস্তু তোলার ফলে পেটের মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে, যা হার্নিয়ার কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি: দীর্ঘমেয়াদি কাশির কারণে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হার্নিয়া প্রতিরোধের উপায়
হার্নিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি আমরা কিছু সহজ জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি। নিচে হার্নিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো:
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী থাকবে এবং হার্নিয়ার ঝুঁকি কমবে।
- ভারী বস্তু তোলার সময় সতর্কতা: ভারী বস্তু তোলার সময় হাঁটু মুড়ে তুলুন, পিঠ সোজা রাখুন। এতে পেটের উপর চাপ কম পড়ে।
- খাবারে ফাইবার যুক্ত করা: খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত করুন, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সাহায্য করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান ফুসফুসে ক্ষতি করে এবং কাশির কারণ হতে পারে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান পরিহার করলে হার্নিয়ার ঝুঁকি কমে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগব্যায়াম ও পেটের ব্যায়াম হার্নিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আর্ম ফ্যাট কমানোর সহজ উপায়: আজই শুরু করুন
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
হার্নিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পেটের কোন অংশে ফোলাভাব থাকে এবং তা ব্যথাযুক্ত হয় বা অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হার্নিয়া সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন হার্নিয়া ফেটে যাওয়া বা ইনফেকশন।
হার্নিয়ার চিকিৎসা
হার্নিয়ার চিকিৎসা সাধারণত সার্জারি দ্বারা করা হয়। বর্তমান সময়ে হার্নিয়ার চিকিৎসায় ল্যাপারোস্কোপি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে কম যন্ত্রণাদায়ক এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব। হার্নিয়া সার্জারির পর জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলে পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
উপসংহার
হার্নিয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করা উচিত নয়। হার্নিয়ার লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনুসরণ করলে হার্নিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। যদি কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হার্নিয়া একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা শরীরের অভ্যন্তরে মাংসপেশি বা টিস্যুর দুর্বলতার কারণে ঘটে। এর কারণে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু শরীরের বাহিরে বেরিয়ে আসে। হার্নিয়া সাধারণত পেটের অংশে হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। হার্নিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকলে এটি প্রতিরোধ করা সহজ হতে পারে। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা হার্নিয়ার লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হার্নিয়া কী এবং কীভাবে ঘটে?
হার্নিয়া হল একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু মাংসপেশি বা টিস্যুর দুর্বল জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এটি সাধারণত পেটের দেয়ালে বা তলপেটে ঘটে। হার্নিয়ার প্রকারভেদ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন ইনগুইনাল হার্নিয়া, ফিমোরাল হার্নিয়া, আম্বিলিকাল হার্নিয়া ইত্যাদি।
হার্নিয়ার প্রকারভেদ:
- ইনগুইনাল হার্নিয়া: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের হার্নিয়া। এটি মূত্রথলির কাছে বা তলপেটের অংশে ঘটে।
- ফিমোরাল হার্নিয়া: এই ধরনের হার্নিয়া বেশি হয় নারীদের মধ্যে, বিশেষ করে গর্ভধারণের পর।
- আম্বিলিকাল হার্নিয়া: এটি সাধারণত নবজাতকদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।
- হায়াটাল হার্নিয়া: এটি যখন হয় তখন পেটের উপরের অংশ ডায়াফ্রামের ফাঁক দিয়ে বুকে চলে আসে।
হার্নিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ
হার্নিয়ার লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে, এবং এর উপস্থিতি অনেক সময় পরিষ্কার বুঝা যায় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা হার্নিয়ার বিষয়ে সতর্ক সংকেত দিতে পারে:
- ফোলাভাব বা অস্বাভাবিক স্ফীতি: শরীরের কোনো অংশে, বিশেষ করে পেটের দেয়ালে বা তলপেটে ফোলাভাব দেখা দিলে তা হার্নিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- ব্যথা বা অস্বস্তি: হার্নিয়া আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে কাশি বা ভারী বস্তু তোলার সময়।
- জ্বালাপোড়া অনুভব: কিছু ক্ষেত্রে হার্নিয়ার কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
- হজমে সমস্যা: হায়াটাল হার্নিয়া হলে বুকজ্বালা, অম্বল বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
হার্নিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ
হার্নিয়া হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থাকতে পারে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
- জিনগত দুর্বলতা: যদি পরিবারের কারও আগে হার্নিয়া হয়ে থাকে তবে আপনারও এই ঝুঁকি থাকতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন: শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে পেটের দেয়ালের উপর চাপ বেশি পড়ে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- গর্ভধারণ: গর্ভধারণের সময় পেটের অভ্যন্তরে চাপ বেড়ে যায়, যা নারীদের হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ভারী বস্তু তোলা: অতিরিক্ত ভারী বস্তু তোলার ফলে পেটের মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে, যা হার্নিয়ার কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি: দীর্ঘমেয়াদি কাশির কারণে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হার্নিয়া প্রতিরোধের উপায়
হার্নিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি আমরা কিছু সহজ জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি। নিচে হার্নিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো:
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী থাকবে এবং হার্নিয়ার ঝুঁকি কমবে।
- ভারী বস্তু তোলার সময় সতর্কতা: ভারী বস্তু তোলার সময় হাঁটু মুড়ে তুলুন, পিঠ সোজা রাখুন। এতে পেটের উপর চাপ কম পড়ে।
- খাবারে ফাইবার যুক্ত করা: খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত করুন, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সাহায্য করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পেটের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান ফুসফুসে ক্ষতি করে এবং কাশির কারণ হতে পারে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান পরিহার করলে হার্নিয়ার ঝুঁকি কমে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগব্যায়াম ও পেটের ব্যায়াম হার্নিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
হার্নিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পেটের কোন অংশে ফোলাভাব থাকে এবং তা ব্যথাযুক্ত হয় বা অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হার্নিয়া সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন হার্নিয়া ফেটে যাওয়া বা ইনফেকশন।
হার্নিয়ার চিকিৎসা
হার্নিয়ার চিকিৎসা সাধারণত সার্জারি দ্বারা করা হয়। বর্তমান সময়ে হার্নিয়ার চিকিৎসায় ল্যাপারোস্কোপি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে কম যন্ত্রণাদায়ক এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব। হার্নিয়া সার্জারির পর জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলে পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
অতিরিক্ত চাপ থেকে দূরে থাকুন
দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কাজের জন্য শরীরের কোনো বিশেষ অংশে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ভারী কাজ করা ইত্যাদি। এ ধরনের চাপ শরীরের বিভিন্ন অংশে দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সচেতনতা
কোষ্ঠকাঠিন্য বা কঠিন পায়খানা হার্নিয়ার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে টয়লেটে চাপ দিতে হয়, যা পেটের দেয়ালে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুনঃ যোগ ব্যায়াম করে মানসিক চাপ কমানোর কার্যকর উপায়
এ কারণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ফলমূল, সবজি, শস্যবীজ ইত্যাদি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বেশি খাবার না খাওয়ার পরামর্শ
প্রতি বার বেশি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বেশি খেলে পেটের উপর চাপ বেড়ে যায় এবং এ চাপ হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বরং ছোট ছোট অংশে বারবার খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে পেটের উপর চাপ কম পড়ে।
কৃমি সমস্যার সমাধান
কৃমি হওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদী কাশি বা বমি হতে পারে, যা হার্নিয়ার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত কৃমির ওষুধ গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃমি থেকে মুক্ত থাকলে পেটের মাংসপেশি সুস্থ থাকবে এবং হার্নিয়ার ঝুঁকি কমবে।
তলপেটের ব্যায়াম করুন
তলপেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে তলপেটের ব্যায়াম করলে মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তা হার্নিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তবে খুব ভারী বা কঠিন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন, যা মাংসপেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য কিছু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ভারী বস্তু তোলা থেকে বিরত থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে কী করবেন?
যদি হার্নিয়ার সার্জারি করা হয়ে থাকে, তবে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সার্জারির পর প্রথম কিছুদিন ভারী বস্তু তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম শুরু করা যেতে পারে এবং ধীরে ধীরে শরীরের কাজের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সার্জারির পর নিয়মিত চেকআপ করা উচিত, যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া যায়।
হঠাৎ ব্যথা বা ফোলাভাব হলে করণীয়
হার্নিয়ার লক্ষণ হিসেবে যদি হঠাৎ করে কোনো ফোলাভাব বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হার্নিয়া যদি ফেটে যায় বা অঙ্গ ধীরে ধীরে আটকে পড়ে তবে তা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে পারে, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে মারাত্মক হতে পারে।
হার্নিয়া সম্পর্কে ভুল ধারণা
হার্নিয়া সম্পর্কে অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই মনে করেন যে হার্নিয়া শুধু পুরুষদের হয়। তবে সত্যি কথা হলো, নারীরাও হার্নিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন, বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়। আবার অনেকে মনে করেন যে হার্নিয়া শুধুমাত্র বয়স্কদের হয়। কিন্তু হার্নিয়া শিশুদের মধ্যেও হতে পারে, বিশেষ করে জন্মগত কোনো মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে। এসব ভুল ধারণা দূর করে হার্নিয়ার প্রকৃত কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।
হার্নিয়া নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও তাদের উত্তর
হার্নিয়া সম্পর্কে সাধারণ কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলো অনেকেরই জানা দরকার। নিচে এমন কিছু প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়া হলো, যা হার্নিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
১. হার্নিয়া কি নিজে থেকেই সেরে যায়?
হার্নিয়া সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায় না। এটি একটি শারীরিক অবস্থা, যা মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে ঘটে। মাংসপেশির এই দুর্বলতা সারানোর জন্য সার্জারি প্রয়োজন হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ছোট আম্বিলিকাল হার্নিয়া শিশুরা বড় হলে সেরে যেতে পারে।
২. হার্নিয়া না সারালে কী হতে পারে?
যদি হার্নিয়া চিকিৎসা করা না হয়, তবে এটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। হার্নিয়া আক্রান্ত অংশটি যদি আটকে যায় বা ফেটে যায়, তবে তা জীবননাশের কারণ হতে পারে। এমনকি এতে আক্রান্ত অঙ্গের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে, যা মাংসপেশি বা টিস্যুর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৩. সার্জারি ছাড়া হার্নিয়ার চিকিৎসা সম্ভব কি?
সার্জারি ছাড়া হার্নিয়ার স্থায়ী সমাধান সাধারণত সম্ভব নয়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন যখন হার্নিয়া খুব ছোট এবং লক্ষণ দেখা যায় না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্নিয়া সেরে ওঠার জন্য সার্জারিই একমাত্র উপায়।
৪. হার্নিয়া সার্জারি কি বিপজ্জনক?
হার্নিয়া সার্জারি সাধারণত নিরাপদ এবং খুবই সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতিতে হার্নিয়ার সার্জারি করা যায়, যা কম কষ্টদায়ক এবং পুনরুদ্ধার দ্রুত হয়। তবে সার্জারি যেকোনো সময়েই কিছু ঝুঁকি নিয়ে আসে, যেমন সংক্রমণ বা রক্তক্ষরণ। সঠিক চিকিৎসকের অধীনে এবং পরামর্শ অনুসরণ করে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
৫. সার্জারির পর পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
সার্জারির পর পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে অনেক বিষয়ের উপর, যেমন রোগীর জীবনযাপন পদ্ধতি, মাংসপেশির শক্তি ইত্যাদি। সঠিক জীবনযাপন, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ভারী কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে পুনরায় হার্নিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হার্নিয়া নিয়ে সতর্কতা এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন
হার্নিয়া প্রতিরোধে এবং সার্জারি পরবর্তী সময়ে সুস্থ থাকার জন্য জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে এমন কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে যা হার্নিয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হয়। নিচে কিছু সাধারণ পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হলো:
আরো পড়ুনঃ গাড়িতে বমি ভাব এড়াতে করণীয়: বিজ্ঞান ভিত্তিক টিপস
ব্যায়াম: পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম মাংসপেশি শক্তিশালী করার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে, যা হার্নিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল, সবজি রাখুন। এই খাবারগুলো হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পেটের উপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনুন। অতিরিক্ত ওজন পেটের মাংসপেশির উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্নিয়ার কারণ হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ মানা: হার্নিয়া সার্জারির পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন। শারীরিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পদ্ধতি অনুসরণ করুন, যাতে মাংসপেশি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ভুল অভ্যাস পরিহার: ধূমপান বা অ্যালকোহলের মতো অভ্যাস পরিহার করুন। ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি কাশির ঝুঁকি বাড়ায়, যা হার্নিয়ার কারণ হতে পারে।
উপসংহার
হার্নিয়া একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। হার্নিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জীবনে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম গ্রহণ করে, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং দৈনন্দিন জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ থেকে বিরত থেকে হার্নিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। সচেতনতা ও সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা হার্নিয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url