স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা
স্ট্রবেরি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এই ফলটি শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। স্ট্রবেরির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিই স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা এবং কেন এই ফলটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
স্ট্রবেরিতে থাকা পুষ্টিগুণ
স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ফলেট এবং পটাসিয়াম। এই পুষ্টিগুণগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে। এছাড়া স্ট্রবেরির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি এর ভূমিকা
স্ট্রবেরিতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে সুন্দর রাখে। নিয়মিত স্ট্রবেরি খাওয়া শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুরুত্ব
স্ট্রবেরির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র্যাডিকেল থেকে শরীরকে রক্ষা করে, যা বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
স্ট্রবেরি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
২. ওজন কমাতে সহায়ক
স্ট্রবেরি কম ক্যালোরিযুক্ত এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধার পরিমাণ কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রবেরি একটি কার্যকরী খাবার।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
স্ট্রবেরির মধ্যে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাসিয়াম শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে।
আরো পড়ুনঃ বাদামের পুষ্টিগুণ এবং বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
স্ট্রবেরিতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক সুগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ ফল হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্ট্রবেরি কীভাবে খেতে পারেন
স্ট্রবেরি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়, তবে এটি বিভিন্ন ডেজার্ট বা স্মুদি তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি সালাদ, জ্যাম বা প্যানকেকও খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও, স্ট্রবেরির রস পান করা শরীরের জন্য উপকারী।
স্ট্রবেরির ত্বকের জন্য উপকারিতা
স্ট্রবেরি কেবল স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবেই নয়, ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
১. ত্বককে উজ্জ্বল করে
স্ট্রবেরিতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে। স্ট্রবেরি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসার জন্য স্ট্রবেরি ব্যবহারের ফেস মাস্ক বেশ কার্যকর।
২. ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে
স্ট্রবেরির মধ্যে উপস্থিত স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করে এবং ব্রণের কারণগুলোর সাথে লড়াই করে। নিয়মিত স্ট্রবেরির ফেস মাস্ক ব্যবহার ত্বকে ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডের সমস্যা কমায়।
৩. বার্ধক্য প্রতিরোধ করে
স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের কোলাজেন উত্পাদন বাড়ায় এবং বলিরেখা ও ফাইন লাইনের সমস্যা প্রতিরোধ করে। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন ধরে তারুণ্য ধরে রাখে।
স্ট্রবেরির চুলের জন্য উপকারিতা
স্ট্রবেরি ত্বকের মতোই চুলের যত্নেও বেশ উপকারী। চুলের বিভিন্ন সমস্যায় স্ট্রবেরির প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে
স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে বা স্ট্রবেরির পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং চুল পড়ার সমস্যা কমে যায়।
২. খুশকি দূর করতে সহায়ক
স্ট্রবেরির প্রাকৃতিক উপাদান খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণাবলী মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা কমিয়ে খুশকি প্রতিরোধ করে। স্ট্রবেরি পেস্ট ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ খুশকির সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৩. চুলকে মজবুত ও চকচকে করে
স্ট্রবেরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলকে মজবুত করে এবং ক্ষতিকর পরিবেশ থেকে রক্ষা করে। এটি চুলের স্বাভাবিক চকচকে ভাব ফিরিয়ে আনে এবং চুলকে শক্তিশালী করে।
কীভাবে স্ট্রবেরি আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন
১. স্ট্রবেরি স্মুদি
স্ট্রবেরি দিয়ে সহজেই স্মুদি তৈরি করা যায়, যা পুষ্টিকর এবং শরীরের জন্য উপকারী। দুধ বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে স্ট্রবেরি ব্লেন্ড করে তৈরি করা স্মুদি সকালে বা বিকালের নাস্তার জন্য আদর্শ।
২. স্ট্রবেরি সালাদ
স্ট্রবেরি বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে সালাদ তৈরি করা যায়। স্ট্রবেরি, পালং শাক, বাদাম এবং জলপাই তেলের মিশ্রণে তৈরি সালাদ একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার।
আরো পড়ুনঃ আনারস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
৩. স্ট্রবেরি জ্যাম
বাড়িতে সহজেই স্ট্রবেরি দিয়ে জ্যাম তৈরি করা যায়, যা ব্রেকফাস্টে রুটি বা প্যানকেকের সাথে খেতে বেশ মজাদার। ঘরে তৈরি জ্যাম বাজারের প্রক্রিয়াজাত জ্যামের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
স্ট্রবেরি কেনার সময় যা লক্ষ্য রাখা উচিত
স্ট্রবেরি কেনার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি, কারণ সঠিকভাবে ফলটি নির্বাচন করলে এর পুষ্টিগুণ পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয়। বাজারে নানা ধরনের স্ট্রবেরি পাওয়া যায়, তবে ভালো মানের স্ট্রবেরি চেনা জরুরি।
১. রঙ ও আকার
স্ট্রবেরির রঙ ও আকার দেখে এর মান বুঝা যায়। তাজা ও পরিপক্ব স্ট্রবেরির রঙ উজ্জ্বল লাল হবে এবং এটি একদম মসৃণ ও পূর্ণ আকারের হবে। রঙ ফিকে বা অংশবিশেষ সাদা থাকলে সেই স্ট্রবেরি সম্ভবত সম্পূর্ণ পরিপক্ব নয়।
২. গন্ধ
তাজা স্ট্রবেরির একটি মিষ্টি ও সুগন্ধি থাকে। যদি গন্ধটি অতিরিক্ত টক বা ফাঁপা মনে হয়, তাহলে সেই স্ট্রবেরি নষ্ট হয়ে থাকতে পারে।
৩. তাজা ও শক্ত স্ট্রবেরি বেছে নিন
স্ট্রবেরি কেনার সময় নরম বা আঁচড়াপড়া স্ট্রবেরি এড়িয়ে চলা উচিত। তাজা স্ট্রবেরি স্বাভাবিকভাবে শক্ত হবে এবং এর ত্বক একদম মসৃণ থাকবে।
স্ট্রবেরি সংরক্ষণ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি খুবই সংবেদনশীল ফল, তাই এটি কেনার পর সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ ধরে রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করা উচিত।
১. ফ্রিজে সংরক্ষণ
স্ট্রবেরি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সবচেয়ে ভালো। তবে ফ্রিজে রাখার আগে স্ট্রবেরি ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। স্ট্রবেরির ওপরে কোন আর্দ্রতা থাকলে তা দ্রুত পচে যেতে পারে।
২. বায়ুনিরোধক পাত্রে রাখা
স্ট্রবেরি ফ্রিজে রাখার সময় তা বায়ুনিরোধক পাত্রে রাখা উচিত। এতে স্ট্রবেরি বেশিদিন তাজা থাকে এবং পচন এড়ানো যায়।
৩. ফ্রিজারের জন্য স্ট্রবেরি জমিয়ে রাখা
যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে এটি ফ্রিজারের মধ্যে জমিয়ে রাখা যেতে পারে। এর জন্য স্ট্রবেরিগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে এবং এরপর বায়ুনিরোধক ব্যাগে বা পাত্রে রেখে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করতে হবে।
স্ট্রবেরির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও স্ট্রবেরি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর একটি ফল, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যাদের স্যালিসিলেট বা পলিগ্রাফি অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের জন্য স্ট্রবেরি খাওয়া নিরাপদ নয়।
১. অ্যালার্জির সমস্যা
স্ট্রবেরিতে থাকা স্যালিসিলেট নামক উপাদান কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
২. অতিরিক্ত পটাসিয়ামের ক্ষতি
স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে, যা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত পটাসিয়াম ক্ষতিকারক হতে পারে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে পটাসিয়ামের অতিরিক্ততা দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
স্ট্রবেরি সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ তথ্য
স্ট্রবেরি শুধু পুষ্টিগুণেই সমৃদ্ধ নয়, এর সাথে যুক্ত কিছু চমকপ্রদ তথ্যও রয়েছে। এই তথ্যগুলো জানলে আপনি স্ট্রবেরি খাওয়ার বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
১. স্ট্রবেরি একমাত্র ফল যেটির বীজ বাইরের দিকে থাকে
অন্য যে কোন ফলের তুলনায় স্ট্রবেরির বীজ বাইরে থাকে, যা এটি একটি অনন্য ফল হিসেবে পরিচিত করে। একেকটি স্ট্রবেরিতে প্রায় ২০০টি বীজ থাকে!
২. স্ট্রবেরি আসলে বেরি নয়
যদিও স্ট্রবেরির নামের মধ্যে ‘বেরি’ রয়েছে, তবে এটি প্রকৃত অর্থে কোনো বেরি নয়। বোটানিকালি, স্ট্রবেরি একটি সম্মিলিত ফল হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এর বীজ বাইরে থাকে।
৩. স্ট্রবেরি হৃদয় আকৃতির ফল
স্ট্রবেরির আকৃতি প্রায়ই হৃদয়ের সাথে মিলে যায়, যা একে ভালোবাসা ও রোমান্টিকতার প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় করেছে। তাই ভালোবাসা দিবসে স্ট্রবেরি একটি বিশেষ উপহার হিসেবেও বিবেচিত হয়।
৪. স্ট্রবেরির ৯০% পানি
স্ট্রবেরি প্রায় ৯০% পানি দিয়ে তৈরি, যা একে হাইড্রেটিং ফল হিসেবে বিবেচিত করে। গরমের দিনে স্ট্রবেরি খেলে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
স্ট্রবেরির ইতিহাস এবং উৎপত্তি
স্ট্রবেরি একটি প্রাচীন ফল, যার উৎপত্তি হাজার বছরের পুরনো। এটি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথম জন্মাতে শুরু করে, কিন্তু এর আধুনিক সংস্করণ আমরা এখন যা দেখতে পাই, তা অনেক গবেষণা ও উন্নতির ফল।
স্ট্রবেরির উৎপত্তির ইতিহাস
স্ট্রবেরি ফ্রান্সে প্রথম চাষ করা হয়েছিল ১৭ শতকের শুরুর দিকে। তবে এর আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা বুনো স্ট্রবেরি সংগ্রহ করে খেতেন। ইউরোপে আসার পর স্ট্রবেরি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এর বিভিন্ন প্রজাতির উন্নতি ঘটানো হয়। বর্তমানে, স্ট্রবেরির বেশ কিছু প্রজাতি সারা পৃথিবীতে চাষ করা হয়।
বিভিন্ন প্রজাতির স্ট্রবেরি
বর্তমানে প্রায় ৬০০ রকমের স্ট্রবেরি প্রজাতি পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা প্রজাতি হলো 'জুন-বেয়ারিং' এবং 'এভার-বেয়ারিং' স্ট্রবেরি। জুন-বেয়ারিং স্ট্রবেরি বছরে একবার ফল দেয়, তবে এভার-বেয়ারিং স্ট্রবেরি বছরের বিভিন্ন সময়ে ফল দেয়।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি একটি বহুবর্ষজীবী ফল, যা সঠিক যত্ন ও পদ্ধতি অনুসারে চাষ করা হয়। স্ট্রবেরির সঠিক বৃদ্ধির জন্য উর্বর মাটি, সঠিক জলবায়ু এবং পরিমিত সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়।
স্ট্রবেরি চাষের সঠিক মাটি
স্ট্রবেরি চাষের জন্য বেলে দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এই ধরনের মাটিতে পানি নিস্কাশন ভালো হয় এবং মাটি উর্বর থাকে। এছাড়া, মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকলে স্ট্রবেরির ফলন ভালো হয়।
আলো ও তাপমাত্রার গুরুত্ব
স্ট্রবেরি গাছের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রয়োজন। দিনে কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক পেলে গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ফলনও বেশি হয়। তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে স্ট্রবেরির জন্য এটি আদর্শ।
সঠিক সেচ ব্যবস্থা
স্ট্রবেরি গাছের জন্য নিয়মিত পানি সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত পানি দিলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। মাটি শুকিয়ে গেলে পরিমিত পরিমাণে পানি দেয়া উচিত।
স্ট্রবেরির অর্থনৈতিক গুরুত্ব
স্ট্রবেরি চাষ সারা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, চীন, তুরস্ক এবং মিশর স্ট্রবেরি চাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাপী স্ট্রবেরির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে ডেজার্ট, আইসক্রিম এবং প্রসেসড ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রবেরির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে স্ট্রবেরির সম্ভাবনা
বাংলাদেশেও স্ট্রবেরি চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের মাটির উর্বরতা এবং জলবায়ু স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযুক্ত। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সীমিত আকারে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে এবং বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। স্ট্রবেরি চাষকে আরও বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করা হলে দেশের কৃষকরা এ থেকে ভালো আয় করতে পারবেন।
স্ট্রবেরির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্ট্রবেরির চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফলটি বিভিন্ন ডায়েট প্ল্যান, কসমেটিক্স, এবং স্বাস্থ্য পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে, ভবিষ্যতে স্ট্রবেরির বাজার আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কমলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
অর্গানিক স্ট্রবেরি চাষের সম্ভাবনা
বর্তমানে অর্গানিক ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, কারণ এতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। অর্গানিক স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে বাজারে এর চাহিদা আরও বাড়ানো সম্ভব, কারণ মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব ফলের দিকে ঝুঁকছে।
উপসংহার
স্ট্রবেরি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু ফল নয়, এটি স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য একটি অসাধারণ উপাদান। এর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে নানা ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। হৃদযন্ত্র থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন, ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে চুলের স্বাস্থ্য—সবকিছুতেই স্ট্রবেরির অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। তাই নিয়মিত স্ট্রবেরি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন এবং সুন্দর, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন।
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url