চোখে এলার্জি হলে কি করনীয়: প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায়
চোখে এলার্জি হলে কি করনীয়: প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায়
চোখে এলার্জি হলে আমাদের অনেকেই ভীত হয়ে পড়ি। এটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা যা সাধারণত ধূলিকণা, পোলেন, পশুর লোম এবং অন্য যেকোনো ধরনের অ্যালার্জেন দ্বারা হতে পারে। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে চোখে এলার্জির প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা যায়।
চোখের এলার্জির লক্ষণসমূহ
চোখের এলার্জির বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
- চোখের লালচে ভাব: এটি চোখে এলার্জির একটি প্রধান লক্ষণ।
- চোখে চুলকানি: চোখে অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে।
- চোখে পানি পড়া: চোখে অতিরিক্ত পানি পড়তে পারে।
- চোখের ফোলা ভাব: চোখের আশেপাশের অংশ ফোলা এবং ফুলে উঠতে পারে।
চোখে এলার্জির কারণ
চোখে এলার্জির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ধূলিকণা: ঘরের ধূলা এবং ময়লা থেকে এলার্জি হতে পারে।
- পোলেন: ফুলের পোলেনও চোখে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
- পশুর লোম: পোষা প্রাণীর লোম থেকেও এলার্জি হতে পারে।
- দূষণ: বায়ু দূষণও চোখে এলার্জির একটি বড় কারণ হতে পারে।
চোখে এলার্জির প্রতিকার
চোখে এলার্জির সমস্যা হলে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধোয়া: চোখে এলার্জি হলে প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিতে পারেন। এটি চোখের চুলকানি কমাবে এবং এলার্জেন দূর করবে।
- চোখে কোল্ড কম্প্রেস ব্যবহার করা: ঠান্ডা কম্প্রেস চোখের লালচে ভাব এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করবে।
- এলার্জির ওষুধ গ্রহণ: ডাক্তারের পরামর্শে এন্টি-হিস্টামিন ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
- কৃত্রিম চোখের পানি: কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করে চোখকে সিক্ত রাখুন।
- এলার্জেন থেকে দূরে থাকা: চোখে এলার্জি হলে এলার্জেন থেকে দূরে থাকুন।
চোখে এলার্জির প্রতিরোধের উপায়
- পরিষ্কার রাখুন: ঘর-বাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। ধূলিকণা জমতে দেবেন না।
- বাহিরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন: সানগ্লাস চোখকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
- পোষা প্রাণীর লোম পরিষ্কার রাখুন: পোষা প্রাণীর লোম নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
- ফুলের পোলেন থেকে দূরে থাকুন: পোলেন এলার্জি থেকে রক্ষা পেতে ফুলের পোলেন থেকে দূরে থাকুন।
চোখে এলার্জির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার
চোখে এলার্জির ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও কার্যকর হতে পারে:
চায়ের ব্যাগ: ব্যবহৃত ঠান্ডা চায়ের ব্যাগ চোখের উপরে প্রয়োগ করলে চুলকানি ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
গোলাপজল: গোলাপজল প্রাকৃতিকভাবে চোখকে শান্ত করে এবং পরিষ্কার রাখে। তুলায় গোলাপজল ভিজিয়ে চোখের উপরে রাখুন, এটি চোখের শীতলতা বৃদ্ধি করবে।
শশার স্লাইস: শশার স্লাইস চোখের উপরে রাখলে তা চোখের শীতলতা ও সুরক্ষা প্রদান করে।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখে এলার্জি সামান্য সমস্যা তৈরি করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে:
- চোখের ব্যথা বা অস্বস্তি যা বাড়তে থাকে।
- চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
- চোখে পুঁজ বা অন্য কোনো পদার্থ নিঃসরণ হওয়া।
- চোখের আশেপাশে চামড়া ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া।
চোখের এলার্জি এবং ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব
ঋতু পরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে বসন্ত এবং শরৎকালে, চোখে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই সময়ে বাতাসে পোলেনের পরিমাণ বেশি থাকে যা চোখের অ্যালার্জেন হিসাবে কাজ করতে পারে। বিশেষত যারা ঋতুগত এলার্জিতে ভোগেন, তাদের জন্য এই সময়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই ধরনের এলার্জিকে আমরা সাধারণত সিজনাল অ্যালার্জি বা হে ফিভার বলে থাকি।
ঋতুগত এলার্জির সময় কি করবেন?
অন্তরীণ অবস্থান বজায় রাখা: পোলেন এবং অন্যান্য অ্যালার্জেন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন, বিশেষত দিনের বেলা যখন পোলেনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে।
ঘরের জানালা বন্ধ রাখা: বাতাসে পোলেনের পরিমাণ বেশি থাকলে জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখুন যাতে অ্যালার্জেন ঘরে প্রবেশ না করে।
এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা: ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন যা অ্যালার্জেন কণাগুলি কমাতে সহায়ক।
বাইরে গেলে সানগ্লাস ও মাস্ক পরুন: সানগ্লাস চোখকে পোলেন এবং ধূলিকণা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে অ্যালার্জেন প্রবেশ কমানো যায়।
চোখে এলার্জির দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা
যদি আপনার চোখে এলার্জি দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যায় এবং প্রাথমিক প্রতিকার কাজে না আসে, তবে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। কিছু দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার উপায় হলো:
এন্টি-হিস্টামিন ড্রপস: দীর্ঘমেয়াদী চোখের এলার্জির চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে এন্টি-হিস্টামিন আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্টেরয়েড ড্রপস: কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড আই ড্রপ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে করতে হবে।
ইমিউনোথেরাপি: যারা ঋতুগত বা নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন থেকে দীর্ঘমেয়াদী এলার্জিতে ভোগেন, তাদের জন্য ইমিউনোথেরাপি একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি শরীরকে ধীরে ধীরে অ্যালার্জেনের সঙ্গে অভ্যস্ত করে তুলতে সাহায্য করে।
FAQs
উপসংহার
চোখে এলার্জি হলে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিরোধ এবং প্রতিকার উভয়ই প্রয়োজন। উপরের পরামর্শগুলি মেনে চললে চোখের এলার্জি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আমাদের নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url